Ajker Patrika

আবেদন ছাড়াই নির্বাচিত কৃষক, ধান মেলেনি

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া) 
আবেদন ছাড়াই নির্বাচিত কৃষক, ধান মেলেনি

প্রায় ৪ মাস ধরে চলেছে সরকারের আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করতে পারলেও ধানের ক্ষেত্রে শূন্য শতাংশে ক্ষান্ত দিয়েছে বগুড়ার শেরপুরের দুটি খাদ্যগুদাম। এ জন্য সরকারি দরের চেয়ে ধানের স্থানীয় বাজারমূল্য বেশি হওয়াকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে কৃষকেরা জানিয়েছেন নানা অব্যবস্থাপনার কথা। আমন ধান বিক্রির জন্য লটারিতে নির্বাচিত হওয়া তো দূরের কথা, আবেদন করার কথাই জানেন না তাঁরা। 
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান গত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

এবার উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে ৪ হাজার ৬২৮ টন চাল ও ৮৬১ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাল সরবরাহের জন্য ১৫৬ মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অন্যদিকে ধান বিক্রির জন্য উপজেলার ৫ হাজার ৪৪৭ নিবন্ধিত কৃষকের মধ্যে ৭১৯ জন আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৮৭ কৃষক লটারিতে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের সবার মোবাইল ফোনে লটারিতে নির্বাচিত হওয়া ও সরকার-নির্ধারিত দামে ৩ টন করে ধান সরবরাহ করার তথ্য মেসেজের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি দরের চেয়ে খোলাবাজারে দাম বেশি হওয়ায় কোনো কৃষক ধান সরবরাহ করেননি। তাই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ হলেও কোনো ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

ধান সংগ্রহের ব্যর্থতা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নানা অসংগতি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তালিকা অনুযায়ী লটারিতে নির্বাচিত ২৮৭ জনের মধ্যে ৫০ জনের মতো কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের কেউই এবারে ধান সরবরাহের জন্য আবেদন করেননি। এমনকি লটারিতে নির্বাচিত হওয়ার খবরও তাঁদের জানা নেই। তাঁদের কেউ ১০ বছর আগে আবার কেউ ২ বছর আগে কৃষক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর উপকার কী, বেশির ভাগ নিবন্ধিত কৃষকই বলতে পারেননি।

সুঘাট ইউনিয়নের ফুলজোর গ্রামের চাষি লতিফ শেখ বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গায় চাষ করি। ৭-৮ বছর আগে ভর্তুকিতে সার ও তেল পাওয়ার আশায় কৃষি অফিস থেকে কার্ড করে দিয়েছিল। কিন্তু এর উপকার কী, জানি না। তা ছাড়া আমি ধানচাষি নই। এবার খাওয়ার জন্য ১০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছি। আর ২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি। তাই সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার জন্য আবেদন করার প্রশ্নই আসে না।’

সীমাবাড়ি ইউনিয়নের বেতগাড়ি গ্রামের রওশন আরা খাতুন বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর আগে কৃষি কার্ড করে ভর্তুকিতে কিছু সার পেয়েছিলাম। এরপর আর কিছু জানি না। আমি কখনো সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আবেদন করি নাই। তা ছাড়া আমার জমি মাত্র দেড় বিঘা। এবার ৪০ মণ ধান পেয়েছি। আমি কীভাবে সরকারের কাছে ৩ টন ধান বিক্রি করব?’

ধান সংগ্রহ করতে না পারাকে নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে নারাজ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন-এ-কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘আমরা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লটারি করে কৃষকদের নির্বাচিত করেছি। তাঁদের প্রত্যেকের মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে কৃষকেরা স্থানীয় বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করেছেন। তাই কেউ আমাদের কাছে আসেননি। আমরা কোনো ধান না পেলেও কৃষকেরা উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছেন। এতেই সরকারের উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত