শুভ বিজয়া

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হচ্ছে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঘটছে তার সমাপ্তি। হিন্দুধর্মবিশ্বাসমতে, অশুভ শক্তির বিনাশ আর ধর্ম রক্ষায় যুগে যুগে মর্ত্যলোকে দেবতাদের আবির্ভাব হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায়ই অসুরকুলের হাত থেকে দেবগণকে রক্ষায় দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছিল। পৃথিবীতে যখনই ব্রহ্মার বরপ্রাপ্তির মতো শক্তিশালী মহিষাসুরেরা ফিরে আসে, ধর্মের গ্লানি হয় এবং পাপ বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের ত্রাস-সংহারে দেবী দুর্গা ফিরে আসেন বারবার।

একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে সামাজিক উৎসবে পরিণত করার ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও কি পাওয়া যাবে? দুর্গাপূজা আনন্দের, আবাহনের, সম্মিলনের এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধেরও প্রতীকী রূপ। দেবী দুর্গা হচ্ছেন অসুরবিনাশিনী এবং দুর্গতিনাশিনী। দেশে যেমন অসুরশক্তি বাড়ছে, তেমনি মানুষের জীবনে দুর্গতিরও শেষ নেই। দুর্গতি নাশ করার জন্যই দেবীর আবির্ভাব। বাঙালি হিন্দুরা যেভাবে দুর্গাপূজাকে আত্মস্থ তথা জীবনের অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেছে, তেমনভাবে আর কেউ করতে পারেনি। মাতৃরূপে বা শক্তিরূপে মা দুর্গা যেমন বাঙালির অন্তরজুড়ে বিরাজ করছেন, তেমনি কন্যারূপে উমা বাঙালির সংসারে এক অভূতপূর্ব আবেগের সঞ্চার করেছেন। কথিত আছে, গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর স্ত্রী মেনকা কন্যা উমা বা পার্বতীকে বিয়ের পর কৈলাসে শিবের ঘরে পাঠিয়েছিলেন।

বলা হয়ে থাকে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। বছরের পর বছর ধরে এই ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলমান যেমন পাশাপাশি বসবাস করে আসছে, তেমনি তারা একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিয়ে সামাজিক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করেছে। বাঙালি সংস্কৃতি যে অন্তর্নিহিতভাবে সর্বপ্রাণবাদী, নারী তথা মাতৃচরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে, দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে তা ফুটে ওঠে। এই গুণাবলি যতটা ধর্মীয় বিশ্বাস, ততটাই সংস্কৃতির প্রাণরসে ঋদ্ধ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সম্প্রীতির পরিবেশ কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, যা সামাল দেওয়া দরকার।

নির্বিঘ্নে পূজা উদ্‌যাপন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও এবার সারা দেশে প্রায় ৩১ হাজারের মতো মণ্ডপে পূজা উদ্‌যাপিত হয়েছে। দু-এক জায়গায় ছোটখাটো কিছু সমস্যা হলেও পূজামণ্ডপগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। মানুষ সাধ ও সামর্থ্যের সমন্বয় করে নতুন জামাকাপড় কিনেছে। প্রায় সব পূজামণ্ডপে মানুষের উপস্থিতি একটি উৎসবমুখর পরিস্থিতির বার্তাই দিয়েছে।

মা দুর্গা এসেছিলেন অসুরকে বধ করতে। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ অসুর যে আমরাই, আমাদের নির্লজ্জ স্বার্থপরতা, আমাদের সংকীর্ণ বিচারবোধ, আমাদের আসুরিক চিন্তা কি দেবী দুর্গা বধ করতে পারবেন? সমাজ ও রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য জনসচেতনতা তৈরির কাজটি এগিয়ে নিতে হবে। ধর্মবিশ্বাস বা অন্য কোনো বিশ্বাসের কারণে কোনো মানুষই যেন অনিরাপদ বোধ না করে, তেমন বাংলাদেশই আমরা চাই।

সবার জীবন সুন্দর ও কল্যাণময় হোক। সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। শুভ বিজয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত