ভেজাল ঘিয়ে বাজার সয়লাব

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ১০
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৩

ঘ্রাণে বোঝার উপায় নেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল ঘি। অভিযোগ আছে ডালডা, পাম অয়েল, নারিকেল তেল, ফ্লেভার, রং তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে ঘি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে খাঁটি গাওয়া ঘি! এসব ঘি বাহারি নাম দিয়ে কৌটাজাত করা হচ্ছে। এরপর বিএসটিআইয়ের নকল সিল বসিয়ে অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন বাজারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে ঘিয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি অসাধু চক্র ভেজাল ঘি তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। আর এসব ভেজাল ঘিতে সয়লাব কর্ণফুলীর অধিকাংশ বাজার। দোকানিরাও এসবকে খাঁটি গাওয়া ঘি হিসেবে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে দোকানিরা আর্থিকভাবে লাভবান অন্যদিকে ঠকছে সাধারণ মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামকে টার্গেট করেই এসব ভেজাল ও মানহীন ঘি বাজারজাত করে। এর মধ্যে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় ভেজাল ঘি কারখানার সংখ্যা বেশি। নির্দিষ্ট এলাকাকে টার্গেট করেই ঘি কারখানা গড়ে উঠে। মার্কেটিং পলিসির মাধ্যমে ঘি বাজারজাত করা হয়। এসব ভেজাল ও মানহীন ঘি খেয়ে মানুষের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মইজ্জেরটেক, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, খোয়াজনগর, শিকলবাহা, মাস্টার হাট, কলেজ বাজার, ফকিনীর হাট, ফাজিলখার হাট, বড় উঠান মিয়ারহাটসহ বিভিন্ন বাজারে মুদির দোকানগুলোতে সুদৃশ্য কৌটায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব ভেজাল ঘি। আবার প্রকারভেদে এসব ঘি উচ্চ মূল্যেও বিক্রি করতে দেখা যায়। ডালডা আর পাম ওয়েল আবার কোন কোনটাতে পাওয়া যায় নারিকেল তেলের গন্ধ। কোন কোন ঘিয়ের কৌটার লেবেলে বিএসটিআইয়ের সিল নকল করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি অসাধু চক্র এসব ভেজাল ঘি ক্রেতাদের ধরিয়ে দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এসব ভেজাল ঘিয়ের মধ্যে বিন্টু ঘি, বাঘা বাড়ি ঘি, থ্রি স্টার ঘি, রূপসা ঘি, কর্ণফুলী ঘি, এসপি ঘি, ভিআইপি ঘি, ডানুফা ঘি, এ সেভেন, কুক-মি ঘি, শাহি স্পেশাল গাওয়া ঘিসহ অন্তত ২০টি ভুঁইফোড় ও অবৈধ কোম্পানির ঘি রয়েছে।

দোকানিরা জানান, সাধারণত প্রতিটি কৌটায় ৯০০ গ্রাম ঘি থাকে। এ পরিমাণ ঘি তৈরিতে ৬০০ গ্রাম পাম ওয়েল, ২০০ গ্রাম ডালডা ও ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘি দেওয়া হয়। এ মিশ্রণে সামান্য পরিমাণে রং ব্যবহার করা হয়। রমজান মাসে ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। এ সুযোগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘিয়ের পাশাপাশি নিম্নমানের ঘিও বিক্রি করে। কম মূল্যে এসব ঘি কিনে নেন।

উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মনোয়ারা বেগম বলেন, রমজান মাসে অবৈধ ঘি কারখানাগুলো বেশি তৎপর হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ছোট্ট কারাখানা বসিয়ে ভেজাল ঘি বানানো হয়। গত বছরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় অভিযান পরিচালনা করেছেন। রমজানের প্রথম দিন থেকে খোঁজ রেখেছি কোথায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল ঘি। আর ক্ষতিকর ঘি গুলো বিক্রি করছেন কারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুরো রমজান মাস জুড়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভেজাল ঘি বিরোধী অভিযান চালানো হবে। যেখানেই ভেজাল নিত্য পণ্য পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে জব্দ ও জরিমানা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত