কুল চাষে কূলের আশা

মতিয়ার রহমান মিঞা, মধুখালী (ফরিদপুর)
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৫: ৪২
Thumbnail image

ফরিদপুরের মধুখালীতে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. জসীম দুই বন্ধু সাজ্জাদ ও মামুনকে নিয়ে শখের বশে করেছিলেন বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি কুলের বাগান। প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেছিলেন ৩৫০টি কুলের চারা। বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেল কুলের এ বাগান দেখতে প্রায় নিয়মিত লোকজন ভিড় করছেন। এ কুলের বাগানটি উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের গড়াই নদীর ধারে ফুলবাড়ী মাঠে অবস্থিত।

মো. জসীম কলেজের শিক্ষার্থী। একই এলাকার রাকিবের বাগান দেখে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ হন জসীম ও তাঁর বন্ধুরা। জসীম বলেন, অনেক আগে থেকেই কৃষির প্রতি তাঁর বেশ আগ্রহ ছিল। রাকিবের বাগান দেখে কুল চাষে আগ্রহী হন। বিষয়টি মা–বাবাকে জানালে তাঁরা উৎসাহের পাশাপাশি অর্থ ও জমির ব্যবস্থা করেন।

পরে গোপালগঞ্জ থেকে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী আপেল কুলের ৩৫০টি চারা সংগ্রহ করেন। এরপর কামারখালী গড়াই নদীর ধারে ফুলবাড়ী মাঠে নিজেদের ৫০ শতাংশ জমিতে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে ৩৫০টি চারা রোপণ করেন।

এখন পর্যন্ত এই বাগানে তাঁর ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। মাত্র সাত মাস পরই গাছগুলোতে কুল আসে। এখন প্রতিটি গাছ কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে। প্রথমে শখ থাকলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছে তাঁর। বাগান দেখে জসীম নিজেই অভিভূত। আশপাশের এলাকার লোকজন আগ্রহ নিয়ে যান বাগান দেখতে।

বাগানে কোনো রোগবালাই দেখা দিলে কামারখালী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজিজুল হকের পরামর্শ নিয়ে ও সঠিক পরিচর্যা করেন। এক মাস পরপর গাছে ওষুধ ছিটাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে তাঁর বাগান থেকে ১১০ টাকা কেজি ও পরে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রয় করছেন। এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার কুল বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে পুরোদমে বাগানের কুল বিক্রির উপযোগী হবে। এ বাগান থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

শিক্ষিত বেকার তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্যে জসীম বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। প্রয়োজনে তরুণ-যুবকদের এ কাজে তিনি সহযোগিতা করবেন।

তিনি বলেন, কুল চাষে শ্রম ও পুঁজি কম লাগে, লাভ হয় বেশি। প্রতিটি কুল গাছ তিন বছর ভালো ফল দেয়। এই কুল সুস্বাদু হওয়ায় মিনি আপেল নামে পরিচিত পেয়েছে, যার বাজারদর বেশি থাকায় বেশি লাভ করা যায়। এই কুল চাষে প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিন বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তিনি অনেক দূর থেকে চারা সংগ্রহ করায় খরচ একটু বেশি হয়েছে।

কামারখালী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক বলেন, কলেজপড়ুয়া ছেলের কৃষির প্রতি ঝোঁক দেখে তিনি খুশি। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন। শখের কাশ্মীরিসহ উন্নত জাতের আপেল কুলের চাষ করলেও জসীমের বাগানে এখন বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ হচ্ছে। তাঁর এই কুল চাষ দেখে অনেক যুবক কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন। তা ছাড়া তিনি ওই কুল বাগান পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। কৃষি অফিসের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণের সহায়তা করলে অনেক যুবকই জসীমের মতো ফলের চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শপথ নিয়েই বাইডেনের নীতি বাতিল ও ১০০ নির্বাহী আদেশের ঘোষণা ট্রাম্পের

শাহজালাল বিমানবন্দরে চাকরি নেননি মনোজ কুমার, বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি

বিপিএলে আতশি কাচের নিচে চল্লিশের বেশি ক্রিকেটার

নতুন ভোটার যাচাই: জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পাচ্ছেন শিক্ষকেরা

বিদ্যালয়ে একই পরিবারের ১৬ জনের চাকরি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত