Ajker Patrika

বন্যায় ৭ জেলায় ক্ষতি ৫ হাজার কোটি টাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২: ১০
বন্যায় ৭ জেলায় ক্ষতি ৫ হাজার কোটি টাকা

পূর্বাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতের ক্ষতির চিত্র উঠে আসতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে শুধু সাত জেলা—ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, মৌলভীবাজারে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হিসাব পাওয়া গেছে। অনেক এলাকায় এখনো ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া যেসব জেলা থেকে ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে, সেগুলোর কিছু এলাকায় এখনো বন্যার পানি রয়ে গেছে। ফলে পুরো ক্ষতি আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বন্যার পানি কমে গেলেও এখনো দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষের। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অনেকে বাড়ি ফিরেছে খালি হাতে। গিয়ে দেখতে পাচ্ছে, সব ভেসে গেছে বানের জলে। দুর্গম এলাকাগুলোয় ত্রাণের সংকট রয়েছে। বন্যার পানির স্রোতে অনেকে এলাকায় সড়ক গেছে ধসে। এতে যান চলাচল করতে পারছে না অনেক এলাকায়। 

প্রশাসন এবং এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে আজকের পত্রিকার সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: 
এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ফেনী। জেলার ছয় উপজেলায় বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৯০০ কোটি টাকা নিরূপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষিতে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ, প্রাণিসম্পদে ৪০০ কোটি, মৎস্যে ২৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ নিয়ে কথা হয় ফুলগাজীর খামারি আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্যার ১৫ দিন আগে খামারে মুরগি নিয়েছিলাম। কোনো কিছুই সরাতে পারিনি। দেড় হাজার মুরগি, সঙ্গে খাবারসহ অন্য সব জিনিসপত্র পানিতে ভেসে গেছে। আমার এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এখন যদি স্বল্প সুদে ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে অনেকে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

ফুলগাজীর কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিনটি গরু লালন-পালন করে কোনোমতে অভাবের সংসার সামলে নিচ্ছিলাম। হঠাৎ এ বন্যা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি বন্যার পানিতেই রেখে যেতে হয়েছে। পানি নামার পর বাড়ি ফিরে এগুলোর আর কিছুই পাইনি।’ 

কুমিল্লায় শুধু কৃষিতে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকতথ্য জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। তবে বন্যা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘কুমিল্লায় বন্যায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এবং তাদের খাবার বিনষ্ট হয়েছে। আমরা ৩০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি, যা আরও বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।’
কুমিল্লায় বন্যায় পুরো ৭০ হাজার হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমন ও সবজিখেত। তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা। মৎস্য খাতে প্রাথমিক সমীক্ষায় ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা।

নোয়াখালীতে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বন্যায় জেলা রোপা আমনের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৫৩৬ হেক্টর, রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে ২৫ হাজার ৬০১ হেক্টর, ৪ হাজার ৫২১ হেক্টর আউশ, ৩ হাজার ২১৬ হেক্টর শরৎকালীন সবজি, ৪৩৬ হেক্টর কলাবাগান, ৫৭ হেক্টর বরজ, আখখেতের ক্ষতি হয়েছে ১৩ হেক্টর, আদা ২০ ও হলুদ ৫৫ হেক্টরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, বন্যার পানিতে ১ হাজার ২৯৩টি খামারের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ ২৫ হাজার ৩৭৬টি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বরজ থেকে পান সংগ্রহ করছেন এক নারী। দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকায় বরজের অধিকাংশ গাছের গোড়া পচে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো মরে যাবে। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মহজমপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকালক্ষ্মীপুরে মৎস্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে জেলার ৫৪ হাজার পুকুর বা ঘেরের মধ্যে ৫০ হাজারের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪০ কোটি টাকা। নিজের ক্ষতির হিসাব দিতে গিয়ে সদরের উপজেলার বশিকপুরের বালাইশপুর এলাকার আদর্শ মৎস্য খামারের মালিক ফারুকুর রহমান বলেন, তাঁর ৬টি পুকুর ও জলাশয় ছিল। সেখানে প্রায় কোটি টাকার মাছ ছিল। বন্যায় সব মাছ ভেসে যায়। অন্যদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব খামারির অবস্থা একই। সবাই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। 

মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও সদর উপজেলায় বন্যার পানিতে আউশ পাকা ধান, আমনের ফসলের মাঠসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিখেত তলিয়ে পচে গেছে। প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর ফসল এবং ৩ হাজার ১টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। বন্যায় জেলায় আমন, আউশ ও সবজি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছ। এই জেলায় ১২৭ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

চাঁদপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মধ্যে রয়েছে শাহরাস্তি, কচুয়া ও হাজীগঞ্জ। এসব জেলায় মৎস্য খাতে ১৭ কোটিসহ ২৫ কোটি টাকার ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে চাঁদপুরে রোপা আমন ব্যাহত হচ্ছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত এবং রোপা আমন লাগানো বিলম্বিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও কসবায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাসাবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে পানি কমলেও এখনো তলিয়ে আছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। সেই সঙ্গে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শুধু কৃষি খাতেই ২০৬ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ছাড়া মৎস্য খাতে ক্ষতি ১৯ কোটি টাকার বেশি। তবে প্রাণিসম্পদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নবরাত্রির জন্য বছরজুড়ে অপেক্ষা, পিরিয়ডের কারণে পালন করতে না পেরে আত্মহত্যা

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আরাকান আর্মির আপত্তি ও শর্ত

আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, খই-মুড়ির মতো বোমা ফুটছে জাজিরায়

অটোতে ফেলে যাওয়া ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দিলেন কলেজছাত্র

পরকীয়া নিয়ে ঝগড়া, স্ত্রীর কাঠের আঘাতে স্বামী নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত