শিক্ষক-সংকটে পাঠদান ব্যাহত

বাপ্পী শাহরিয়ার, চকরিয়া (কক্সবাজার)
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ১১: ৪৮

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ১৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০২ শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি প্রধান শিক্ষকের ও ৬৫টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়েও রয়েছে জনবল-সংকট। উপজেলার ১৩টি পদের মধ্যে ৯টি পদ খালি রয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা, দুজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাব সহকারীর ৪টি পদ নিয়ে ধীরগতিতে দেড় শতাধিক স্কুলের কার্যক্রম সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাঘাত ঘটছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৭৭টি সরকারি, ৬০টি জাতীয়করণকৃত ও ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয় প্রকল্পের ৭টিসহ  ১৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১ হাজার ৫২টি। তার মধ্যে ১০২টি পদ শূন্য রয়েছে। স্কুলগুলোর মধ্যে ৩৭টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। পদগুলো দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ৬৫টি পদও শূন্য রয়েছে। উপজেলা সব স্কুলে ৭০ হাজার ১৮৬ শিক্ষার্থী রয়েছে।

এ ছাড়া ছয়জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ থাকলেও দুজন কর্মরত রয়েছেন। সবশেষ ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মো. মুনিরুজ্জামান সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ৪টি পদ কোনোটি এক যুগ, আবার কোনোটি অর্ধ যুগ শূন্য পড়ে আছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে হিসাব সহকারী ১টি, উচ্চমান সহকারী ১টি, অফিস সহকারী ৩টি ও ১টি অফিস সহায়কসহ ৬টি পদ রয়েছে। তার মধ্যে হিসাব সহকারী একটি পদ ছাড়া বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে।

উপজেলা ও পৌরসভার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, তিন শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান করছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। ওই স্কুলে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ রয়েছে ৮টি। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক একই সঙ্গে দুই শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন। কয়েকটি বিদ্যালয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় শিক্ষক-সংকটে পড়ে ক্লাস কার্যক্রম রুটিন করে চালানো হচ্ছে। এতে একজন শিক্ষক একসঙ্গে দুটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নূর জাহান বলেন, ‘৩ বছর ৮ মাস ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ে ৭টি শিক্ষকের স্থলে আমরা ৬ জন শিক্ষক শিক্ষাদান করছি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০৫ জন। কোনো শিক্ষক ছুটি কিংবা অফিসের কাজে গেলে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদানে বাকিদের হিমশিম পড়তে হয়।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের অনেক পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, সেসবের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতেও কোনো কাজ হয়নি। সারা দেশে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, আশা করছি এই সংকট শিগগিরই সমাধান হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত