নৌজটের মূলে নাব্যতা-সংকট

সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪৭
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩০

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও জামালগঞ্জে আবারও নাব্যতা-সংকট দেখা দিয়েছে। নদী খনন না করায় প্রতিবছর এ সময় এই সমস্যা হচ্ছে। বন্ধ থাকছে বালু-পাথরবাহী নৌযান চলাচল। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের দাবি, নদী খনন করে দ্রুত সংকট দূর করা হোক।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন দিলেই খনন শুরু হবে।

১০ দিন ধরে তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বৌলাই নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশজুড়ে নৌজট সৃষ্টি হয়। এতে পাঁচ শতাধিক বালু-পাথরবোঝাই নৌকা আটকা পড়ে। এমন অবস্থায় নৌযান শ্রমিকেরা ১০ দিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করেন। অবশেষে গতকাল রোববার ভোর থেকে স্বাভাবিক হয় নৌ চলাচল। চলতে শুরু করে বালু-পাথরবাহী নৌযান।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর ফাজিলপুর এলাকায় থেকে বালু-পাথর নিতে আসেন নৌযান শ্রমিকেরা। নদীতে নাব্যতা-সংকটের কারণে ৬ জানুয়ারি থেকে জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের বৌলাই নদের হিজলা, হাওরিয়া আলীপুর, বদরপুর, বেহেলীসহ প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাঁচ শতাধিক নৌযান আটকা পড়ে।

এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব নৌযানের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের; পাশাপাশি লোকসানের মুখে পড়েন বিভিন্ন অঞ্চলের বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা। আটকে থাকা নৌকার শ্রমিক ও ভারতীয় আমদানি করা কয়লা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি নদী খননের। তাঁরা বলছেন, সরকার এ শিল্প থেকে বছরে শতকোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে, অথচ নদী খননের কোনো উদ্যোগ নেই।

ফাজিলপুর বালু পাথর ব্যবসায়ী মো. আ. আজিজ জানান, দীর্ঘ সাত-আট বছর ধরে বৌলাই নদ ও আবুয়া নদীতে বছরের এ সময় নাব্যতা-সংকট দেখা দেয়।

এতে প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নৌযানগুলো পণ্য নিয়ে যাওয়ার সময় বিপাকে পড়ে। এতে শ্রমিকদের পাশাপাশি নৌকার মালিকদেরও ক্ষতি হয়।

তাহিরপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এক বছর ধরে সুলমানপুর এলাকার বৌলাই নদ থেকে খনন কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সুলেমানপুরেই খননকাজ চলছে। এক বছরে এখনো এক কিলোমিটার জায়গায় নদী খননের কাজ হয়নি।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শফিক মিয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, বালু-পাথরের জন্য সুনামগঞ্জ জেলার খ্যাতি রয়েছে।

প্রতিবছরই এই সময় তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জের নৌপথের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে পলিমাটিতে নদী ভরাটের কারণে নৌজট সৃষ্টি হয়। এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত এই জট লেগে থাকে।

তিনি আরও জানান, সরকার রক্তি নদী খনন করেছে, তবে বৌলাই নদ খনন না করা পর্যন্ত এই খননের সুফল পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তাহিরপুরের বৌলাই ও পাঠলাই নদের খননকাজ চলছে এক বছর ধরে। তবে ঠিকাদার ধীরগতিতে খননকাজ করায় দুটি নদের প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পাউবোর সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ৯৮ কিলোমিটার নদীর খনন করা হয়েছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে। আরও ১৪ কিলোমিটার নদী খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. জহুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা অনুমোদন হলেই খনন শুরু হবে, তখন আর নাব্যতা-সংকট থাকবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত