চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন আগামী ৫ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে অন্তত ছয়জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাঁদের মধ্যে চরবাগডাঙ্গা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিদ রানা টিপুর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকের চারটি মামলা। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে।অভিযোগ আছে, পুলিশের সহায়তা নিয়েই রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে ইয়াবা ও হেরোইনের চালান পাচার করেন টিপু। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তবে গোদাগাড়ী থানায় দায়ের করা মাদকের একাধিক মামলায় আসামি হলেও অভিযোগপত্র থেকে রেহাই পান টিপু। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ও ১১ জুন এবং ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের তিনটি মামলার এজাহারে তাঁর নাম ছিল। তবে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে তাঁর নাম নেই।

২০১৪ সালে র‍্যাব-৪ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২০০টি ইয়াবাসহ একটি ট্রাক জব্দ করে। ওই মামলায় টিপু এজাহারভুক্ত আসামি। তবে ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শ্রীবাস চন্দ্র দাস তাঁকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে শাহিদ রানা টিপু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলা নেই। আমি মাদকের সঙ্গে কোনো দিন সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। জনগণ চায় দেখে এবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি।’

এদিকে চরবাগডাঙ্গা ইউপি নির্বাচনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী মো. জুয়েল রানার বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন এবং মিরপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।বক্তব্য জানতে জুয়েল রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। 
চরবাগডাঙ্গা ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিচ্ছেন মো. নুরুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় একটি ও গোমস্তাপুর থানায় একটি মাদকের মামলা রয়েছে।

জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক।চারবাগডাঙ্গা ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিচ্ছেন আরেক ‘মাদক কারকারি’ আশরাফুল ইসলাম শুকুদ্দি। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা রয়েছে। ইউপি সদস্য থাকা অবস্থায় চাঁপাইনবাগঞ্জ পৌর এলাকার বটতলাহাটে ৩ হাজার ৩৫০টি ইয়াবাসহ তিনি গ্রেপ্তার হন। জানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, ‘মানুষের সেবা করতে গিয়ে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।’ এ ছাড়া ইসলামপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলম মাদকের মামলায় দুই বছর ধরে কারাগারে আছেন। তাঁর পক্ষেও মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, ‘মাদক কারবারি হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে যেহেতু বাধা নেই, সেহেতু এঁরা যেন নির্বাচিত না হতে পারেন, এ জন্য ভোটারদের সজাগ থাকা উচিত। কারণ, মাদক কারবারিরা নির্বাচিত হলে আরও ভয়ানক হয়ে উঠবেন।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান বলেন, কেউ জনপ্রতিনিধি হলেই মাদকের কারবারে জড়িয়ে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। জনপ্রতিনিধি বা অন্য কেউ, তিনি যে-ই হোন, মাদক কারবারে জড়ালে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়।