৪ মাস বেতন নেই শ্রমিকদের

নাইমুর রহমান, নাটোর
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২২, ০৬: ৪১

নাটোর চিনিকলের বর্তমান ও সাবেক কর্মী এবং শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন, পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চিনিকল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পাওনা টাকা থেকে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

চার মাস ধরে বেতন বন্ধ নাটোর চিনিকলের পরিবহন সেকশনের টেইলর ফিটার সদরুল ইসলামের। তিনি বলেন, সাকল্যে তাঁর মাসিক বেতন ২৬ হাজার টাকা। নাটোর চিনিকলে চার মাস ধরে তিনি বেতন পান না। শুরুর দিকে ঈশ্বরদী থেকে যাতায়াত করলেও বেতন বন্ধ হওয়ার পর উঠেছেন চিনিকল-সংলগ্ন একটি মেসে। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের টাকা পাঠাতে পারেন না।

সদরুল ইসলামের চেয়ে আরও খারাপ অবস্থা ট্রলি মেরামতের কর্মী সুজন হোসেন, মান্নান মজুমদার, সাইদুল ইসলামদের। পাবনা থেকে আসা এই তিন মেকানিকও বেতন পান না চার মাস ধরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় থেমে গেছে তাঁদের দিনযাপন।

২০০২ সাল থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে করণিকের চাকরি করেন আব্দুর রাজ্জাক। মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কষ্টে চলে তাঁর দিন। সেই বেতনও বন্ধ চার মাস ধরে। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে আর কয়েক মাস বেতন বন্ধ থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখন যা-ও আধপেটে খাচ্ছি, সামনে আর সম্ভব হবে না।’

শুধু কর্মরত শ্রমিকেরাই নন, পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন মিলের ৩৮০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী। আট বছর ধরে আটকে আছে তাঁদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটির ৫১ কোটি টাকা। দীর্ঘ এই সময়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেক শ্রমিক-কর্মচারী, বন্ধ হয়ে গেছে তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়া। উপরন্তু, অডিট আপত্তির নামে তাঁদের থেকে টাকা কর্তন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডে চিনিকলের পক্ষ থেকে নির্ধারিত পরিমাণের কম টাকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পাওনা টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক কল্যাণ পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৮০ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি বাবদ ৩৪ কোটি টাকা ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১৭ কোটি টাকা এখনো বুঝে পাননি। এ সময় অডিট আপত্তির জন্য ফেরতদানের শর্তে সব শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা কেটেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০০৩ সালের একটি অডিট আপত্তি দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। অডিট নিষ্পত্তি হলেও কোনো টাকা এখনো ফেরত পাননি তাঁরা। এ ছাড়া তাঁদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ টাকা দিলেও চিনিকল কর্তৃপক্ষ সমপরিমাণ টাকা দেওয়ার পরিবর্তে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ টাকা দেয়।

কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান ভুলু বলেন, ‘দেশের অন্য চিনিকলগুলো শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাঁদের জমার সমপরিমাণ টাকা যোগ করে। একমাত্র ব্যতিক্রম নাটোর চিনিকল। কেন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা এমনটি করেন, তা কারও জানা নেই। তাঁরা জবাবদিহি করেন না। জনপ্রতি ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম দিলে কয়েক হাজার শ্রমিকের কত টাকা লুট হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা এই অবস্থার পরিত্রাণ চাই।’

সংগঠনের সভাপতি আলাউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ‘পাঁচটি চিনিকলের অডিটে আপত্তি জানানো হলেও কোনো চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের থেকে অডিট নিষ্পত্তির জন্য টাকা তোলা হয়নি। এমনটি হয়েছে শুধু নাটোর চিনিকলে। এ ছাড়া ওপরের দু-একটি বাদে সব পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অবিলম্বে সবার বকেয়া বেতন, গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা প্রদানের দাবি জানাই।’

এ ব্যাপারে নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর বলেন, কোনো কর্মকর্তা বা শ্রমিক অবসরে গেলে করপোরেশনকে জানানো হয়। করপোরেশন তাঁর প্রাপ্য পাওনা পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। কয়েকজন অবসরপ্রাপ্তের জন্য একত্রে কিছু টাকা বরাদ্দ আসে। এই টাকা সমান অনুপাতে দেওয়া হয়। পরে আবারও টাকা পাওয়া সাপেক্ষে তা পরিশোধ করা হয়। চাহিদামতো বরাদ্দ না পাওয়ায় বকেয়া টাকার পরিমাণ বেড়ে চলছে। আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে পরিপত্র অনুযায়ী ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ করপোরেশনের পক্ষ থেকে যোগ করা হয়। তাই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত