রাহুল শর্মা, ঢাকা
শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকা এবং ‘তাড়াহুড়ো’ করায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে এ উদ্যোগ। সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে এরই মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই। মাঝপথে এসে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সব বইয়ের। এতে গচ্চা যাচ্ছে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ। শিক্ষকদের দেওয়া প্রশিক্ষণ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। পাশাপাশি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এখনো কাটেনি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হোঁচট খাওয়ার জন্য দায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও অযোগ্যতা। তাদের মতে, যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া অবলম্বন না করায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে উদ্যোগটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, বাড়ছে তাদের শিখন ঘাটতি।
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
প্রত্যাহার করা দুটি বই না পড়েই পরের শ্রেণিতে উঠবে শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে শিক্ষণ ঘাটতিতে পড়বে বলে মত শিক্ষাবিদদের।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৭৮ লাখ বই প্রত্যাহার করায় গচ্চা গেছে সরকারের অন্তত ২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ফের বই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ায় বেশ কিছু টাকা খরচ হচ্ছে। তবে এনসিটিবির এক কর্মকর্তার দাবি, বই প্রত্যাহার ও সংশোধনে আরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, বইয়ের সংখ্যা এবং খরচের প্রকৃত তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লুকোচুরি করছেন, যাতে কেউ প্রকৃত ক্ষতির চিত্র জানতে না পারে।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকে (ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি) যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, তা সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ চলছে। ঈদের পর সংশোধনীগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।
অপরিপক্ব সিদ্ধান্তে হোঁচট
অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হোঁচট খেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারিকুলাম তৈরি করতে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত ছিল না। যাঁরা এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, বিভিন্ন সময় তাঁদের অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। এ জন্য শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন।
শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, এ ধারা বজায় থাকলে বিশেষ করে যুক্তিযুক্ত সমালোচনা অগ্রাহ্য করতে থাকলে ভবিষ্যতে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সমস্যা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।
শিখন ঘাটতি বাড়বে
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, প্রত্যাহার হওয়া দুই বই না পড়েই পরের শ্রেণিতে উঠবে শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে শিক্ষণ ঘাটতিতে পড়বে বলে মত শিক্ষাবিদদের। তবে এ শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি পড়ার সুযোগ না থাকলেও ‘অনুশীলনী পাঠ’ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে। তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বইগুলো অ্যাকটিভিটি বেজড। ফলে বই দুটি প্রত্যাহার করলেও শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না।
এখনো সংশোধন হয়নি পাঠ্যবই
নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক উঠলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে এনসিটিবি। এ ছাড়া ওই দিন আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’—এই তিন বইয়েও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। কিন্তু পরে হঠাৎ করেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই সংশোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সংশোধনী দিতে পারেনি এনসিটিবি।
মূল্যায়নপদ্ধতি, প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন-ধোঁয়াশা
জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও মূল্যায়নের সমন্বিত কাঠামো তৈরি করতে পারেনি এনসিটিবি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সংরক্ষণের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এরই মধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে পরীক্ষাও নিয়েছে। যদিও নতুন শিক্ষাক্রমে গতানুগতিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল না। পরে পরীক্ষা না নিতে নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।
এনসিটিবি সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের পাঁচ দিনব্যাপী অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে প্রশিক্ষণের মান নিয়ে শিক্ষকেরা সন্তুষ্ট নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ১৫ জন শিক্ষক জানান, নতুন শিক্ষাক্রমের অনলাইনে প্রশিক্ষণের মান সন্তোষজনক ছিল না। ফলে অনেক বিষয় তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। এতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে।
ক্লাস রুটিনে পরিবর্তন আসছে
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হওয়ার প্রায় চার মাসের মাথায় ক্লাস রুটিনে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে এনসিটিবি। বিষয়টি ঈদের পর মাঠপর্যায়ে জানানো হবে।
মাউশির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘চার মাস পর ক্লাস রুটিন পরিবর্তনের উদ্যোগ এনসিটিবির খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলত অতি উৎসাহীদের পরামর্শে তাড়াহুড়ো করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম; যার ফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
নোট-গাইডে বাজার সয়লাব
মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষাকে আনন্দময় করারই নতুন শিক্ষাক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য। এর রূপরেখায় বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বুঝে শিখবে এবং সৃজনশীল হয়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের কোনো নোট-গাইড ও কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ভেস্তে যেতে বসেছে এ উদ্দেশ্য। কারণ, ইতিমধ্যে ‘সহায়ক বই’ নামের গাইড বইয়ে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। রাজধানীর একাধিক বইয়ের বাজার ঘুরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা অবশ্য জানান, কৌশলে নতুন শিক্ষাক্রমকে বিতর্কিত করতে সহায়ক বইয়ের নামে গাইড বই বাজারে ছাড়ছে অসাধু পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। বিষয়টি একাধিক গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, এগুলো নোট-গাইড নয়, সহায়ক বই। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে বইগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা দীর্ঘদিন ধরে এসব সহায়ক বইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতেই এগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকা এবং ‘তাড়াহুড়ো’ করায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে এ উদ্যোগ। সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে এরই মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই। মাঝপথে এসে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সব বইয়ের। এতে গচ্চা যাচ্ছে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ। শিক্ষকদের দেওয়া প্রশিক্ষণ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। পাশাপাশি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এখনো কাটেনি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হোঁচট খাওয়ার জন্য দায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও অযোগ্যতা। তাদের মতে, যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া অবলম্বন না করায় শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে উদ্যোগটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, বাড়ছে তাদের শিখন ঘাটতি।
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
প্রত্যাহার করা দুটি বই না পড়েই পরের শ্রেণিতে উঠবে শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে শিক্ষণ ঘাটতিতে পড়বে বলে মত শিক্ষাবিদদের।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৭৮ লাখ বই প্রত্যাহার করায় গচ্চা গেছে সরকারের অন্তত ২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ফের বই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ায় বেশ কিছু টাকা খরচ হচ্ছে। তবে এনসিটিবির এক কর্মকর্তার দাবি, বই প্রত্যাহার ও সংশোধনে আরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, বইয়ের সংখ্যা এবং খরচের প্রকৃত তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লুকোচুরি করছেন, যাতে কেউ প্রকৃত ক্ষতির চিত্র জানতে না পারে।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকে (ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি) যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, তা সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ চলছে। ঈদের পর সংশোধনীগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।
অপরিপক্ব সিদ্ধান্তে হোঁচট
অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হোঁচট খেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারিকুলাম তৈরি করতে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত ছিল না। যাঁরা এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, বিভিন্ন সময় তাঁদের অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। এ জন্য শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন।
শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, এ ধারা বজায় থাকলে বিশেষ করে যুক্তিযুক্ত সমালোচনা অগ্রাহ্য করতে থাকলে ভবিষ্যতে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সমস্যা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।
শিখন ঘাটতি বাড়বে
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, প্রত্যাহার হওয়া দুই বই না পড়েই পরের শ্রেণিতে উঠবে শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে শিক্ষণ ঘাটতিতে পড়বে বলে মত শিক্ষাবিদদের। তবে এ শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি পড়ার সুযোগ না থাকলেও ‘অনুশীলনী পাঠ’ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে। তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বইগুলো অ্যাকটিভিটি বেজড। ফলে বই দুটি প্রত্যাহার করলেও শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না।
এখনো সংশোধন হয়নি পাঠ্যবই
নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক উঠলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে এনসিটিবি। এ ছাড়া ওই দিন আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’—এই তিন বইয়েও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। কিন্তু পরে হঠাৎ করেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই সংশোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সংশোধনী দিতে পারেনি এনসিটিবি।
মূল্যায়নপদ্ধতি, প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন-ধোঁয়াশা
জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও মূল্যায়নের সমন্বিত কাঠামো তৈরি করতে পারেনি এনসিটিবি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সংরক্ষণের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এরই মধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে পরীক্ষাও নিয়েছে। যদিও নতুন শিক্ষাক্রমে গতানুগতিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল না। পরে পরীক্ষা না নিতে নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।
এনসিটিবি সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের পাঁচ দিনব্যাপী অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে প্রশিক্ষণের মান নিয়ে শিক্ষকেরা সন্তুষ্ট নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ১৫ জন শিক্ষক জানান, নতুন শিক্ষাক্রমের অনলাইনে প্রশিক্ষণের মান সন্তোষজনক ছিল না। ফলে অনেক বিষয় তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। এতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে।
ক্লাস রুটিনে পরিবর্তন আসছে
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হওয়ার প্রায় চার মাসের মাথায় ক্লাস রুটিনে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে এনসিটিবি। বিষয়টি ঈদের পর মাঠপর্যায়ে জানানো হবে।
মাউশির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘চার মাস পর ক্লাস রুটিন পরিবর্তনের উদ্যোগ এনসিটিবির খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। মূলত অতি উৎসাহীদের পরামর্শে তাড়াহুড়ো করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম; যার ফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
নোট-গাইডে বাজার সয়লাব
মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষাকে আনন্দময় করারই নতুন শিক্ষাক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য। এর রূপরেখায় বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বুঝে শিখবে এবং সৃজনশীল হয়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের কোনো নোট-গাইড ও কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ভেস্তে যেতে বসেছে এ উদ্দেশ্য। কারণ, ইতিমধ্যে ‘সহায়ক বই’ নামের গাইড বইয়ে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। রাজধানীর একাধিক বইয়ের বাজার ঘুরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা অবশ্য জানান, কৌশলে নতুন শিক্ষাক্রমকে বিতর্কিত করতে সহায়ক বইয়ের নামে গাইড বই বাজারে ছাড়ছে অসাধু পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। বিষয়টি একাধিক গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, এগুলো নোট-গাইড নয়, সহায়ক বই। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে বইগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা দীর্ঘদিন ধরে এসব সহায়ক বইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতেই এগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে