এক পায়ে আলোর পথে

মোহাম্মদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ১২: ৩৬
Thumbnail image

স্কুলছাত্রী সুমাইয়া (১০) স্বপ্ন বড় হয়ে ডাক্তার হবে। এর মধ্যেই জীবন অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠেছে তার কাছে। মাত্র দুই বছর বয়সের রাস্তায় ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় তার বাম পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু ‘প্রতিবন্ধী’ তকমা নিয়ে থেমে যেতে সে রাজি নয়। তাই এক পায়ে ভর দিয়েই স্কুলে যায় সুমাইয়া। এ জন্য প্রতিদিন তাকে আসা-যাওয়ায় প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া।

সুমাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আট বছরে অনেক চিকিৎসা করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অর্থোপেডিক ডাক্তাররা বলেছেন অনেক টাকা হলে আমার মেয়ের পা ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আমার পক্ষে রিকশা চালিয়ে এত টাকা খরচ করা সম্ভব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। সুমাইয়া আমার মেঝে মেয়ে। অভাবের সংসার, তাই বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। বাড়িতে থাকলে হয়তো কোলে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতাম। তার এভাবে স্কুলে যাওয়া-আসা দেখে এক বুক পাহাড় সমমান কষ্ট হয়। ডাক্তার বলেছেন তিন লাখ টাকা হলে তাকে ভালো করা সম্ভব। তাই আমি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি।’

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার উত্তর আলোকডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া। প্রতিদিন এক কিলোমিটার রাস্তা পিঠে ব্যাগ নিয়ে এক পায়ে লাফিয়ে স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয় সে। ছোট্ট মেয়েটির এভাবে স্কুলে যাওয়ার অনুপ্রেরণামূলক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান এলাকাবাসী। বইভর্তি একটি ভারী ব্যাগ নিয়ে তার এই স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য যেন মানুষের অন্তরে নাড়া দেয়।

তার স্কুল উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ বলেন, ‘১০ বছরের সুমাইয়ার কাজ আমাদের আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। চিকিৎসার অভাবে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। সুমাইয়ার পড়াশোনা খুবেই ভালো। আমরা তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। সুমাইয়া আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। দেশের প্রতিটি শিশু সুশিক্ষা চায়। সেই সুশিক্ষা অর্জন করে সে অনেক বড় হোক আমরা তার জন্য এই কামনায় করি।’

সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, ‘মেয়ে যখন স্কুলে যায়, তখন তার খুঁড়ে খুঁড়ে যাওয়ার এ দৃশ্য দেখে আমি মা হয়ে আর সহ্য করতে পারি না। দুই চোখে শুধু পানি আসে। শুধু প্রার্থনা আল্লাহর কাছে আমার মেয়ে সুমাইয়া যেন সুস্থ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সবার মতো দুই পা দিয়ে হেঁটে চলতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত