‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের আশ্রয়কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পুলিশের একটি মামলার পর তাঁর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছেন দুই ব্যক্তি।

কয়েক দিন ধরেই মিল্টন সমাদ্দার ও তাঁর প্রতিষ্ঠান নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা মানুষের অঙ্গ চুরি, মৃতদের মরদেহ গোপনে দাফন, আশ্রয় দেওয়া মানুষকে নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে গত বুধবার সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার মিল্টনের বিরুদ্ধে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে মৃতদের জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন ডিবির উপপরিদর্শক মো. কামাল পাশা। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে মিল্টনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় ডিবি পুলিশ। শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে শিশু পাচার ও আশ্রিতদের মারধরের অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় গতকাল আরও দুটি মামলা করেন দুই ব্যক্তি। 

ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, মিল্টন সমাদ্দার মরদেহ দাফনের যে হিসাব দিয়েছেন, সেখানে গরমিল আছে। তিনি ৯০০ মরদেহ দাফন করার কথা বললেও ৮৩৫টি মরদেহ দাফনের কোনো কাগজপত্র তাঁর কাছে নেই। এ ছাড়া তিনি নিজেই মৃত্যুসনদ তৈরি করে চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল জাল (নকল) করতেন। লাশের শরীর থেকে কিডনি পাচারের অভিযোগও রয়েছে। এসব বিষয়ে তাঁকে রিমান্ডে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করার ছবি-ভিডিও শেয়ার করে আলোচনায় আসেন মিল্টন সমাদ্দার। এ জন্য তাঁকে অনেকে অর্থ সহায়তা দেন। মিরপুর ও সাভারে তাঁর এমন দুটি কেন্দ্র রয়েছে। ওই আশ্রয়কেন্দ্রে নানা অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তৎপর হয় পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার রাতে মরদেহ দাফন করতেন। দাফনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কোনো সনদ না নিয়ে নিজেই লিখে স্বাক্ষর করতেন এবং সিটি করপোরেশনের সিল নিজেই মারতেন। সেই কাগজগুলো আমরা উদ্ধার করেছি।’ তিনি বলেন, মিল্টনের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যক্তিদের মারধরের অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে আইনানুযায়ী তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে।

এর আগে বুধবার রাতে হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মিল্টন স্বীকার করেছেন, সেখানে (আশ্রয়কেন্দ্র) অপারেশন থিয়েটার আছে। যদি অপারেশন থিয়েটার থাকে বা হাসপাতাল থাকে, সেটির লাইসেন্স থাকতে হয়। কিন্তু তিনি কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। তাঁর বিরুদ্ধে কিডনি বিক্রির অভিযোগের তদন্ত করা হবে।

মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। হারুন অর রশীদ বলেন, বাবাকে পেটানোর পর মিল্টনকে এলাকাবাসী গ্রামছাড়া করে। পরে ঢাকার শাহবাগে এসে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। সেখানে ওষুধ চুরির কারণে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করেন। পরে স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন।