Ajker Patrika

ভোলায় বিকল্প কাজের খোঁজে জেলেরা

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২২, ১১: ৫৯
ভোলায় বিকল্প কাজের খোঁজে জেলেরা

নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ। একদিকে পুনর্বাসনের চাল না পাওয়া, অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সুদসহ ঋণের টাকার চিন্তায় বিপাকে ভোলার জেলেরা। পরিবার নিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটানো জেলেরা বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তনে ঝুঁকছেন। ইতিমধ্যে অনেকে বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন।

তবে প্রশাসনের কাছে অসহায় জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার সময়ে সব জেলেকে সরকারি খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার দেওয়ার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৪৬ হাজার। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ৯৩ হাজার জেলের জন্য চালের বরাদ্দ এসেছে। বাকিদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। এদিকে পুনর্বাসনের চাল ২২ দিনেও অধিকাংশ জেলের কাছে পৌঁছায়নি। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা।

বাধ্য হয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় কিছু অসাধু জেলে নদীতে মাছ ধরছেন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অনেক জেলেকে আটক করেছে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি করা হয়েছে জরিমানা। জাল ও মাছ জব্দ করা হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভোলা শহরের যুগিরঘোল এলাকায় বেশ কয়েকজন বিক্রেতাকে ইলিশ, পোয়া, বাটা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে যাঁরা নদীতে যেতে পারছেন না, তাঁদের অনেকে জাল, নৌকা মেরামতে ব্যস্ত।

নদীতে অভিযান চলাকালীন জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ জেলেরা। সরেজমিনে সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলা খালের মাছঘাটে দেখা গেছে, কয়েকজন জেলে অলস সময় কাটাচ্ছেন, কেউ আবার বসে জাল বুনছেন।

জেলে মনির হোসেন বলেন, ‘নদীতে এখন অভিযান চলছে। মাছ ধরা বন্ধ। স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ২২ দিনেও এখনো কোনো চাল পাইনি। তবে শুনেছি ইউনিয়ন পরিষদে চাল আইছে। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে মাটি কাটার কাজ নিয়েছি।’

একইভাবে জেলেরা পেশা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন একই এলাকার জেলে রাশেদ (২৬)। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী ও ১ ছেলে নিয়ে সংসার। অভিযানের কারণে নদীতে মাছ ধরতে পারছি না। অন্যদিকে, আশা সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ও ব্র্যাক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। ঋণের কিস্তি দিতে হয় নিয়মিত। পুনর্বাসনের চাল এখন পর্যন্ত পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়েছি। এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। এতে সংসার চলছে কোনোরকমে।’

জেলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘অভিযানের কারণে অহন ৩টি এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে পারছি না। শুনেছি ইউনিয়ন পরিষদে চাল এসেছে। কিন্তু ২২ দিনেও চাল পাইনি। তাই পরিবার নিয়ে জেলেরা বিপদে রয়েছেন। সরকার যদি এই নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করত, তাহলে কষ্ট কমত। বাধ্য হয়ে অনেকে বিকল্প পেশা খুঁজছেন।’

এ বিষয়ে শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, চাল বরাদ্দ এসেছে, কিন্তু এখনো বিতরণ করা হয়নি। আগামীকাল (বুধবার) বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে জেলায় ১ লাখ ৪৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে থাকলেও জেলে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ এসেছে ৯৩ হাজার জেলের জন্য। এতে সবাই পাচ্ছেন না চাল। অন্যদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ নিয়মিত মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযান চালাচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। কিছু ইউনিয়নে চাল বিতরণ বাকি রয়েছে। তবে আশা করা যায়, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সব জেলের মধ্যে চাল বিতরণ শেষ হবে। তখন হয়তো জেলেদের এমন সমস্যা থাকবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত