আজ আইয়ুব বাচ্চু জন্মদিন

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২১, ১২: ১২
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৩৮

জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ নেওয়াজ। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে স্মৃতিচারণা করেছেন তাঁকে নিয়ে।

বাচ্চুর সঙ্গে এত এত স্মৃতি। বলে শেষ করা যাবে না। তার শুরুটাও আমার হাতে, শেষটাও আমার হাতে। তার সঙ্গে প্রথম দেখা ১৯৮২ সালের দিকে। তখন আমাদের সোলস ব্যান্ডে গিটারিস্টের সংকট ছিল ওই সময় বাচ্চু আমাদের কাছে এসে আগ্রহ প্রকাশ করে। তার চোখেমুখে একটা জেদ আর প্রতিভার ছাপ দেখেছিলাম। পরে আগ্রাবাদ হোটেলে বসে তার সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়। সে সোলসের সদস্য হয়ে যায়। সে থেকেই তার সঙ্গে শুরু।

বাচ্চু যোগ দেওয়ার পরপরই আমাদের ব্যান্ডে গান আর সুরের ধরন পাল্টে যায়। তার গিটারের সুর আমাদের এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে আমাদের গান তার গিটারকে ঘিরে হতে লাগল। আমরা তখন দু-তিন ঘণ্টা প্র্যাকটিস করতাম। কিন্তু বাচ্চু লেগে থাকত। সে প্র্যাকটিস করত রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত।

তার গিটার শেখার হাতেখড়ি হয়েছিল স্পাইডার ব্যান্ডের জ্যাকব ডায়েসের হাত ধরে। তিনি তখন চট্টগ্রামের বেশ নামকরা গিটারিস্ট। বাচ্চু শুধু গিটারই বাজাত না। গানও লিখত। নিজেই সুর দিত। গিটার নিয়ে সে যা খুশি তাই করতে পারত।

তার সবচেয়ে বড় গুণ হলো সে খুব ডিভোটেড ছিল। আমার বিশ্বাস যদি সে বাংলাদেশে জন্ম না নিয়ে বিদেশে কোথাও জন্ম নিত তবে বিশ্বের প্রথম সারির কোনো গিটারিস্ট হতে পারত। আমরা যখন কোথাও ঘুরতে যেতাম, খেতে যেতাম সেখানেই গান বানিয়ে ফেলতাম। পরে সেগুলো সুর দিত বাচ্চু।

নগরের জুবিলী রোডে নুরুজ্জামান সওদাগরের বাড়িতে থাকত বাচ্চু। প্রতি কোরবানিতে আমরা সেখানে গরুর গোশত আর পরোটা খেতে যেতাম। তার মা আমাদের জন্য কত যত্ন করে রান্নাবান্না করতেন, আপ্যায়ন করতেন তা এখনো মনে আছে। সে আমার অনেক জুনিয়র হলেও আমরা ছিলাম বন্ধুর মতোই। তার যত আবদার সব আমিই মেটাতাম।

বাচ্চু ছিল ভোজন রসিক। তখন নগরে ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট খুঁজে খুঁজে সে আমাদের নিয়ে খেতে যেতো। সে ছিল খুব শৌখিন। হঠাৎ একদিন আমাকে বলল নেওয়াজ ভাই আপনি থাকেন, আমি এসে আপনাকে গাড়ি নিয়ে পিক করব। কিছুক্ষণ পর দেখলাম সে একটা মিনি টাইপ গাড়ি নিয়ে এল। সেটিতে দুজন বসা যায়, কিন্তু তিনজন হলেই মুশকিল। গাড়িতে ওঠার পর আমাকে বলল, ‘নেওয়াজ ভাই হালিশহরের অমুক জায়গায় ভালো কবুতরের রোস্ট বিক্রি করে। চলেন খেয়ে আসি।’

আইয়ুব বাচ্চুসোলসকে ঘিরে আমাদের স্মৃতির শেষ নেই। তবে মনে আছে ৯০ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর আমরা লাইভ এইড নামে তিন দিনের একটি ফেস্টিভ্যাল করেছিলাম। টানা তিন দিনই আমরা সেখানে পারফর্ম করেছি। সেখানে বাচ্চুর বাজানো আর ইংরেজি গান শুনে শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। এরপর থেকে বাচ্চুর নাম ছিল মানুষের মুখে মুখে।

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনার পরই বাচ্চুর সঙ্গে সোলসের সম্পর্ক ছেদ হয়। সেখানে একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। বাচ্চু হঠাৎ গানের মধ্যেই গিটার ছুড়ে ফেলে চলে যায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিই তাকে না রাখার। এটির পরই আমাদের সঙ্গে তার পথচলা শেষ হয়। এরপরই ঢাকায় চলে যায় বাচ্চু।

বাচ্চুর শেষটাও আমার হাত দিয়েই। তাঁর জানাজার সব আয়োজন আর প্রস্তুতি আমি নিজ হাতে নিই। এটি ছিল চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় জানাজাগুলোর একটি। মৃত্যুর পরও আরও বহু বছর এই গুণী শিল্পীকে মনে রাখবে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত