রাজধানীতে যানজটের বড় কারণ সিএনজি ফিলিং স্টেশন

সৌগত বসু, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ১৬
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ২১

রাজধানীতে যানজট নিরসনে বুয়েটের দুই বিশেষজ্ঞ সরকারকে ছয়টি সুপারিশ করেছেন। তার ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে পাইলট প্রকল্প শুরু করবে সরকার। সুপারিশগুলোর মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে, ছোট ইন্টারসেকশনের (মোড়) ৫০ মিটার এবং বড় ইন্টারসেকশনের ১০০ মিটারের মধ্যে গাড়ি পার্ক করা, যাত্রী ওঠানামা ও যানবাহন থামানো যাবে না। আরেক সুপারিশে বলা হয়েছে, ছোট ইন্টারসেকশনগুলোয় ট্রাফিক সিগন্যালে সর্বোচ্চ ২ মিনিট, আর বড় ইন্টারসেকশনের সিগন্যালে সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের বেশি দেওয়া যাবে না।

কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) তথ্যমতে, সারা দেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে ৫০২টি। ঢাকায় রয়েছে ১৩৫টি। এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০১৪ সালের আগে। এসব ফিলিং স্টেশনের বেশির ভাগই ঢাকার প্রধান সড়ক লাগোয়া। বেশ কিছু ফিলিং স্টেশনের অবস্থান ছোট-বড় ইন্টারসেকশনের কাছাকাছি।

ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, ফিলিং স্টেশনগুলোর কারণে অফিস সময়ে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অনেক জটিল হয়ে পড়ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ফিলিং স্টেশন সরানো সহজ হবে না। তবে একটা কাঠামোগত পদ্ধতির মাধ্যমে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজার মোড়ে অবস্থিত অনুদ্বীপ ফিলিং স্টেশন ও মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত জামান ফিলিং স্টেশন এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এই প্রতিবেদক। মগবাজারের ফিলিং স্টেশনটির অবস্থান মগবাজার মোড় থেকে ২০ মিটার দূরে মিন্টো রোডের দিকে যেতে ডান দিকে। ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে সিএনজি কনভার্সন ওয়ার্কশপও রয়েছে। এদিকে হাতিরঝিল থেকে মেরুল বাড্ডা হয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এগোতে হাতের বাঁ পাশে পড়ে জামান ফিলিং স্টেশন। এখানে গাড়ির সিরিয়াল মাঝে মাঝে হাতিরঝিলের বাস কাউন্টার পার হয়ে যায়।

গতকাল দেখা যায়, মগবাজারের অনুদ্বীপ ফিলিং স্টেশনে গাড়ির সারি শুরু হয় পাশে থাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের ইস্কাটন গার্ডেন রাস্তা থেকে। মগবাজারের এই পাশটা থেকে মালিবাগ-মৌচাকের তেজগাঁও যাওয়ার ফ্লাইওভারে ওঠানামার র‍্যাম্প রয়েছে। র‍্যাম্পের কারণে চার লেনের রাস্তা দুই লেনে পরিণত হয়েছে। আর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের গাড়ির সিরিয়ালের জন্য সেটি এক লেনে পরিণত হয়।

অনুদ্বীপ ফিলিং স্টেশনের কর্মীরা জানান, ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে আসা গাড়িগুলোকে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে সিরিয়ালে থাকতে হয়। গাড়ির চালকদের সিরিয়াল নম্বর লেখা কার্ড দেওয়া হয়।

তবে মগবাজার মোড়ে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই ফিলিং স্টেশন তাঁদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ। প্রতিদিন সকালে-বিকেলে ফিলিং স্টেশনের জন্য আলাদা করে দুজন ট্রাফিক সদস্যকে রাখতে হয়। ফিলিং স্টেশনকে বলা হয়েছে, তারা হলি ফ্যামিলির সামনের রাস্তা থেকে দুটি বা তিনটি গাড়ি সিরিয়াল অনুযায়ী ছাড়বে। কিন্তু সেটি কখনো হয় না। পুরো রাস্তাজুড়ে এক লেন তাদের দখলে থাকে। ফলে গাড়ির জট মিন্টো রোড পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটি ভিআইপি রাস্তা হওয়ায় বারবার সিগন্যাল ছাড়তে হয়। এতে গাড়ির চাপ বাড়ে মৌচাক রুটে। এই রুটের সিগন্যাল কখনো কখনো ১৫-২০ মিনিট আটকে রাখতে হয়।

ট্রাফিক পুলিশের এই সদস্য আরও বলেন, তাঁদের এই মোড়ে সময়ভেদে চারজন ট্রাফিক সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের নেতৃত্বে থাকেন একজন সার্জেন্ট। তবে সকালে তাঁদের একজন সদস্যকে আলাদাভাবে ফিলিং স্টেশনের সামনে দাঁড়াতে হয়। তারপরও গাড়ির সিরিয়াল ঠিক রাখা যায় না। কখনো কখনো ভিআইপি পরিচয় দিয়ে সিরিয়াল ভেঙে ফিলিং স্টেশনে গাড়ি ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়। এতে পুরো রাস্তাই ব্লক হয়ে যায়।

মগবাজার ও মেরুল বাড্ডার মতো ঢাকায় এসব ফিলিং স্টেশন যানজটকে ভয়াবহ করে তুলছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় পার হয়েই পরপর দুটি—তিব্বত মোড়ের আগে একটি এবং মহাখালীতে প্রধান সড়কের সঙ্গে একটি ফিলিং স্টেশনও যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, তাঁদের ইন্টারসেকশনগুলোয় গাড়ির জট ছাড়াতে হিমশিম খেতে হয়। প্রধান সড়কে এসব ফিলিং স্টেশনের কারণে রাস্তার অনেকটা ব্লক হয়ে থাকে। এতে চাপ বাড়ে ইন্টারসেকশনগুলোয়।

ঢাকার যানজট নিরসনে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের যে দুই অধ্যাপক সুপারিশ করেছেন, তাঁদের একজন অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা যে সুপারিশ দিয়েছেন, সেখানে মূলত লোডিং-আনলোডিং না করার কথা বলা হয়েছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো আগে থেকেই স্থায়ী হয়ে গেছে। এগুলো চাইলেই সরানো যাবে না। তিনি বলেন, ফিলিং স্টেশনগুলো যখন অনুমোদন করা হয়, তখন কোনো কিছু চিন্তা করা হয়নি। মোড়ের এত কাছে ফিলিং স্টেশন ঢাকায় যানজটের বড় কারণ। এদের ক্ষেত্রে নিয়ম করতে হবে।

আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই ফিলিং স্টেশনগুলোর অনুমোদন অনেক আগেই হয়েছে। ২০১৪ সালের পর রাজধানীতে আর কোনো ফিলিং স্টেশন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যখন দেখা গেল এসব ফিলিং স্টেশনের জন্য যানজট বাড়ছে, তার পর থেকে আর কোনো ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। যখন দেওয়া হয়েছিল তখন এসব এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত