বাচ্চু ও জুয়েল দুই ভাইয়ের গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৮: ৩৭
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৮: ৪০

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই দেখতেন জুয়েল। তখন কলেজে পড়েন, দ্বিতীয় বর্ষে। বাচ্চুর সংগীতে একটি অ্যালবাম প্রকাশ পায় তপন চৌধুরীর। সেই অ্যালবামের গানগুলো জুয়েলের তরুণ মনে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল। স্বপ্ন দেখতেন, যদি কখনো তাঁর অ্যালবাম বের হয়, বাচ্চুকে দিয়েই সুর-সংগীত করাবেন।

১৯৮৬ সালে বরিশাল থেকে ঢাকায় পা রাখেন জুয়েল। পেশাগত সংগীতসফর তখনো শুরু হয়নি। বন্ধুদের আড্ডায় গান শোনান। একদিন তাঁর মনে অ্যালবাম প্রকাশের স্বপ্ন বুনে দেন বন্ধু শিমুল মুস্তাফা। কিন্তু জুয়েলের ইচ্ছা, আইয়ুব বাচ্চুকে দিয়ে অ্যালবামটা করানোর। কীভাবে পৌঁছানো যাবে তাঁর কাছে? পাওয়া গেল বাচ্চুর বন্ধু জামির খোঁজ। তাঁর সঙ্গে এক দুপুরে বাচ্চুর বাসায় হাজির জুয়েল। সেই প্রথম সামনাসামনি জুয়েলের আইয়ুব বাচ্চু (এ বি) দর্শন।

এক টিভি অনুষ্ঠানে সেদিনের স্মৃতিচারণা করে এ বি বলেছিলেন, ‘জামি ওকে আমার কাছে দিয়ে চলে গেল। আমি জুয়েলকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি খেয়েছ? বলল, না খাইনি। আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করলাম। আমার খুব ভালো লাগল জুয়েলকে। এত ডাউন টু আর্থ একটা ছেলে! বিশ্বাস ছিল, ও ভালো গাইবে। তারপর ওকে বললাম, একটা গান শোনাও তো।’ বাচ্চুর সুর করা, তপন চৌধুরীর গাওয়া ‘আমার গল্প শুনে’ ধরলেন জুয়েল। প্রথম কয়েক লাইন গাওয়ার পরেই থামিয়ে দিলেন বাচ্চু, ‘আর গাইতে হবে না, থামো।’ ওই কয়েক লাইনেই বাচ্চু বুঝে গিয়েছিলেন, জুয়েল কত ভালো মানের গায়ক।

অনেকেই জুয়েলকে জানত ‘আইয়ুব বাচ্চুর ভাই’ বলে। এটা শুধু কাছাকাছি চেহারার গড়নের কারণে নয়। জুয়েলের প্রতি বাচ্চুর অপরিসীম স্নেহের কারণেও ভক্তদের মধ্যে এমন ধারণা ছিল। জুয়েলের ১০টি একক অ্যালবামের মধ্যে ৭টির সুর-সংগীত করেছেন বাচ্চু। আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরেই বের হয় জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’।

এরপর গান তৈরি, রেকর্ডিং—সব পর্ব পেরিয়ে বাচ্চুর সুর-সংগীতে ১৯৯৩ সালে বাজারে আসে জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’। প্রথম অ্যালবামেই সাড়া ফেলে দেন তিনি। বাংলা সংগীতে যোগ হয় এক নতুন প্রতিভার নাম—হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। পরে তাঁর আরও ৬টি অ্যালবাম প্রকাশ পায় বাচ্চুর হাত ধরে।

এ দুজনের পারস্পরিক সম্পর্ক বরাবরই এত ভালো ছিল যে একটা সময় মিথ তৈরি হয়ে গিয়েছিল—আইয়ুব বাচ্চুর আপন ভাই জুয়েল। বাচ্চুকে অনেকে জিজ্ঞেস করলে তিনিও সেটা স্বীকার করে নিতেন। বলতেন, ‘জুয়েল হচ্ছে আমার শ্রেষ্ঠ পাওয়া।’ অন্যদিকে নিজের ক্যারিয়ারে বাচ্চুর অবদান যে কতটা ব্যাপক, সেটা জুয়েল বরাবরই স্বীকার করে বলতেন, ‘মানুষ যে জুয়েলকে চেনে, তাকে তৈরির সব কৃতিত্ব বাচ্চু ভাইয়ের।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত