দেওয়ানগঞ্জে সরিষা খেতে মৌমাছি ছেড়ে মধু সংগ্রহ

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৩
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ২৯

মাঠে মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য। পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে সুন্দর এক হলুদের চাদরে। তাই এই সুযোগে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মৌ চাষিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার খেত থেকে মধু সংগ্রহে। ফসলি জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।

উপজেলার মাছেনিরচর এলাকায় ৫০০টি মৌমাছির বাক্স বসিয়ে পোষা মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা ফুলে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে সরিষা ফুলে ফুলে পরাগায়ন ঘটে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে সরিষা ফুলে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে স্বাভাবিক ফলনের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফলন বেশি হয়। সরিষা ফুলে মৌমাছির মাধ্যমে মধু আহরণের ফলে সরিষা ফলনে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা বাড়ে। এতে করে মৌয়ালী ও কৃষক দুজনই লাভবান হয়।

উপজেলার মাছেনিরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ সরিষা খেতের পাশে বাক্স বসিয়ে পোষা মৌমাছি দিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা।

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নিপেন্দ্র ধামের ছেলে কানুরামের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল এসেছে এই উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরিষার এই মৌসুমে সরিষা খেত থেকে দুইবার মধু সংগ্রহ করতে পারেন তারা। মৌমাছি চাষি শেরপুর জেলার কানুরাম জানান, সরিষার মধু যেমন খাঁটি তেমনি স্বাদযুক্ত। তাই বাজারে এই মধুর বেশ চাহিদা রয়েছে।

মধুর দামও বেশ ভালো। গতবছর মধু আহরণ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, তাদের বাক্সে রানি মৌমাছি, পুরুষ মৌমাছি ও শ্রমিক মৌমাছি এই তিন ধরনের মৌমাছি আছে। কানুরাম জানান, এক সপ্তাহে প্রতিটি মৌমাছি বাক্সের প্রতি প্যানেলে দেড় কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করতে পারে। আর প্রতি বাক্সে থাকে ৫টি প্যানেল। সে অনুযায়ী একটি বক্সে ১০ কেজি করে মধু আহরণ করা যায় বলে জানান তিনি। মধুচাষি কানুরাম আরও জানান, গত বছর তিনি ৪০০টি মৌমাছির বাক্সে ১০০ মণ মধু সংগ্রহ করেছিলেন।

যা প্রায় ১০ হাজার টাকা মণ প্রতি বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি আরও ১০০টি মৌমাছির বক্স বৃদ্ধি করে ৫০০টি মৌমাছির বক্স বসিয়েছেন। মধু বিক্রি করা প্রসঙ্গে কানুরাম জানান, দেশের ও দেশের বাইরের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে মধু কিনে নেয়।

তার মধ্যে প্রাণ, ডাবর, বিভিন্ন আয়ুর্বেদ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের থেকে মধু কিনে নেয়। এবার এই উপজেলায় ৩০০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এই উপজেলায় প্রতিবছর ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়ে থাকে।

এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষ করতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত