সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখনো কৌতূহলের বিষয় হিসেবেই বিবেচিত। গোড়া থেকেই বাঙালি অভিজাতশ্রেণি বাংলা ভাষাকে তাদের শ্রেণিগত স্বার্থে অবজ্ঞা করে আসছে। এই অবজ্ঞা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মঙ্গলার্থে প্রয়োগের চেষ্টা করেনি বা আজও করছে না। তারা যেমনি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় রাষ্ট্রকে মহাসংকটে নিপতিত করেছে, তেমনি ভাষাকেও। বাংলা ভাষার যে সংকট, তা মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরই সংকট। প্রকৃত অর্থে শাসকশ্রেণির নিজেদেরই সংকট।
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙালির বিশেষভাবে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের কাল। এ মাসকে কেন্দ্র করেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, জ্ঞান সাধনার ফলটুকু এই জাতির মননচর্চাকারীরা গ্রন্থাকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে চর্চার ওই নদীপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করছে মেধাহীনরা। এদের সঙ্গী বই ব্যবসায়ীরা। কথা ছিল বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার নেতৃত্বটা থাকবে বাংলা একাডেমির হাতে। রয়েছেও সেখানেই। কিন্তু বাণিজ্যের আক্রমণে বইমেলার অনেকটা এখন জ্ঞানপিপাসু তরুণদের বদলে বিনোদনপ্রিয় তরুণদের দখলে চলে গেছে।
দরকার ছিল গ্রন্থাগার আন্দোলনের। পঞ্চাশ বছরেও তা আর গড়ে উঠল না। আন্দোলনের পেছনে থাকে মহৎ উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে গেছে। তাই আন্দোলনও নেই। প্রয়োজন ছিল সৃষ্টিশীল বইয়ের বাজার সৃষ্টি। তা আর হলো কই। নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেননা, ভাষা আন্দোলনের মাতৃভূমি তো হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কাঁটাবনের যে পশু-পাখির বাজার, সেখানে গেলে অরণ্যচারী, আকাশচারী পশুপাখির বন্দিশালা চোখে পড়ে। বন্দিদশায় মুক্তির আশায় তাদের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে অতীতে মুক্তির গান শুনিয়েছে, তারই জমিন কাঁটাবন স্বাধীন প্রাণীদের জেলখানায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল সেখানে বইয়ের বাজার হবে। তা আর হলো না।
অন্য সবকিছুর মতো বইয়েরও বিপণন চাই। তার জন্য প্রতিটি শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিপণনকেন্দ্র গড়ে তোলা। লোকে জানবে বই কোথায় পাওয়া যায়। সেখানে যেমন শিক্ষার্থীরা যাবে, তেমনি যাবে গ্রন্থপ্রেমীকেরাও। জানা থাকবে যে সেখানে গেলে কেবল বই নয়, বইয়ের খবরও পাওয়া যাবে। কোনো কর্তৃপক্ষেরই এদিকে খেয়াল নেই, বই তো ভোগ্যপণ্য নয় যে মানুষ বাধ্য থাকবে কিনতে; বইয়ের মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক। প্রকাশকেরা বইকে মুনাফার উপাদানে পরিণত করেছেন সাধারণ পাঠকের ক্রয়ের সীমাকে তোয়াক্কা না করেই। মুদ্রণ ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেখানে সরকারের দেখভাল করা দরকার ছিল। অথচ সরকার ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয়, বইয়ের বেলায় নয়। ব্যাংক প্রকাশনা খাতে ঋণ দেয় না। উচিত ছিল বই প্রকাশ আর বিপণনের বিষয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। দরকার ছিল কাগজ আমদানি, মুদ্রণযন্ত্র আমদানির বেলায় ট্যাক্স মওকুফ করা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলা বানানরীতি। এটি নিয়ে নানা হইচই হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাজন নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমি প্রমিত রীতির কথা বলেছে। সংবাদপত্রগুলোও একক কোনো রীতি মানছে না। পাঠ্যপুস্তকেরও একই দশা। ভাষা একটি অথচ তার বানানরীতিতে ঐক্য নেই। এটা হচ্ছে ভাষার ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই জরুরি।
বাংলা ভাষার দুর্দশাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখ মেললেই। টিভির পর্দা, দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পণ্যের বিজ্ঞাপন—সবকিছুতেই বাক্য আর বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। এতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারেরও নেই কোনো দায়। আসলে অর্থনীতিতে, সমাজে, পারিবারিক জীবনে আজ যে নৈরাজ্য চলছে, বাংলা ভাষার দুর্দশা তারই অংশ।
মানুষের জীবনে ভাষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভাষার ব্যবহার না থাকলে মানুষ মানুষ থাকে না, তার আত্মপ্রকাশের পথ যায় রুদ্ধ হয়ে, আত্মপরিচয় অবলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে, আত্মসম্মান যে বৃদ্ধি পাবে, সে আশা বজায় থাকে না। ভাষা তো কেবল ওপরকাঠামোর অংশ নয়। তার যোগ অবকাঠামোর সঙ্গেও। শিক্ষা, দক্ষতা, যোগাযোগ—কোনো কিছুই বৃদ্ধি পায় না ভাষার অনুশীলন ভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান, বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। তদুপরি বিশ্বের ছাব্বিশ-সাতাশ কোটি মানুষের সে মাতৃভাষা। বাংলাকে উপেক্ষা করার মতো অন্যায় কাজ আমাদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। কেবল ফেব্রুয়ারি নয়, বছরজুড়েই আমাদের ভাষাচেতনা অক্ষয় থাকুক ও শক্তিশালী হোক।
২. জনমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অতি পুরোনো প্রশ্ন, কিন্তু তার আবির্ভাব নিত্যনতুন এবং অব্যাহত। প্রশ্নটার তো মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা, কেননা জনমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন বস্তু এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র কল্পকাহিনি মাত্র। আমাদের এই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দায়িত্ব হওয়ার কথা আইন প্রণয়ন, সরকারের নির্বাহী অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, সরকারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সরকারি নির্বাহী কার্যক্রমের স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রের বৈদেশিক চুক্তি ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। কিন্তু আমাদের সংসদে এসব কাজ যে প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে, এমনটা বলার কোনো সুযোগই নেই।
সংসদে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, উত্তেজনা যে সৃষ্টি হয় না, তা-ও নয়; কিন্তু জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সেখানে ভীষণ অনীহা দেখা যায়। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি জনমাধ্যমের কার্যকলাপের যে কঠিন সমালোচনা কয়েকজন সদস্য করেছেন, তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলেছে, সেটি আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ঘটনাটি বেদনাদায়ক বটে, অপ্রত্যাশিতও বৈকি; তবে একে যে অস্বাভাবিক বলা যাবে, তা নয়। কেননা, আমাদের শাসকশ্রেণি সমালোচনার স্পর্শ মাত্র সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, এ ব্যাপারে তারা বড়ই স্পর্শকাতর। এর কারণ হচ্ছে তারা নৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। এটা তাদের জানাই আছে যে তারা নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতায় এসেছে এবং যখন ক্ষমতা তাদের কোনো অংশের একচ্ছত্র হয়ে পড়ে, তখনো এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয় যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থই শুধু দেখে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। সমালোচনার আওয়াজ শুনলেই তারা খেপে ওঠে, ভাবে তাদের বুঝি পতন ঘটবে।
ওদিকে এরা নিজেরা নানা ধরনের আওয়াজ তোলে। কেউ বলে দিনবদল ঘটিয়ে তবে ছাড়বে, কেউ বলে তাদের উন্নয়নের বন্যায় ভেসে লোকে আনন্দে নৃত্য করবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তারা চায় সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকে স্তব্ধ করে দিতে। কেউ যদি প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে তাহলে তার গলা চেপে ধরতে উদ্যত হয়। কণ্ঠরোধের এই কাজটাই তারা করতে চায়, যে জন্য জনমাধ্যমের ওপর বিষোদ্গার করাটা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাদের ভঙ্গিটা এ রকমের যে আমরা যেহেতু রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেয়ে গেছি, তাই আওয়াজ যা দেওয়ার আমরাই দেব, অন্যরা তা শুনবে। এসব ধ্বনি আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। তারা নিজেরা ধ্বনি দেবে এবং সেই ধ্বনি সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হবে, এটাই তাদের কামনা।
তবে সরকারি দল যে সব সময় এক গলায় কথা বলে, তা নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর শোনা যায়। যেমন মন্ত্রীদের একজন বলেছিলেন যে তাঁরা দ্রব্যমূল্যকে কবজার ভেতর নিয়ে আসতে পারবেন। কেননা, সরকারি টিসিবিকে তাঁরা আবার চালু করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক মন্ত্রী আওয়াজ দিয়েছেন, না, তা নয়, আমরা মুক্তবাজার চালু রাখব। বাজারই দাম নামিয়ে আনবে। ফলে টিসিবি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে এবং দাম মোটেই নামেনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস বলছে, এখানে কোনো বিরোধী দলই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারপক্ষ থেকে বাধা এসেছে, বিরোধী দলের নিজের মধ্যেও সেই নৈতিক জোরটা দেখা যায়নি, যার ওপরে ভর করে রুখে দাঁড়াবে; তদুপরি জনগণের কাছে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তা-ও নয়। এ ক্ষেত্রে সমালোচনা যেটুকু পাওয়া যায় তা আসে জনমাধ্যমের কাছ থেকেই। তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া আর একনায়কত্ব কায়েমের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না।
জনমাধ্যমকে যখন সবাক ও নির্বাক উভয় প্রকারের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বর্তমান সরকারই আবার সংসদে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস করেছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হবে জনগণকে ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন। এমন বৈপরীত্য আমাদের দেশের বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও যে দেখা যাচ্ছে সে আর বিচিত্র কী! এই আইন প্রণয়নের পেছনে অবশ্য তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছিল। অনুমান করা অন্যায় হবে না যে সরকার যখন সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকেই অসহ্য মনে করে, তখন এই আইন নামে থাকবে, কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
শাসকশ্রেণি স্বেচ্ছায় জনগণকে ক্ষমতাবান করা দূরে থাক, জনমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো রকম প্রকাশকেই সহ্য করবে না। সহ্য যাতে করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ দরকার হবে। আর সেই চাপটা যে দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে—তাদের একটি হচ্ছে ওই জনমাধ্যম নিজে এবং অপরটি, যেটি আরও জরুরি, সেটি হলো বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। দ্বিতীয়টি গড়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রথমটি, অর্থাৎ জনমাধ্যম, দ্রুতই নিজেকে সংগঠিত করে তুলতে পারে যদি জনমাধ্যমের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। সাংবাদিকের ঐক্য পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, যে জন্য কোনো সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠত। সেই ঐক্যটা এখন আর নেই। শাসকশ্রেণি সাংবাদিক ও জনমাধ্যমের কর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে, আর এ জন্যই জনমাধ্যম এখন অতটা বিপন্ন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় ভাষার মাস। আজ ঘরে ও বাইরে আমাদের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলা যে নিরাপদে রয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারে তালগোল পাকিয়ে আছে। বাংলা ভাষা প্রশাসনিক কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-নৈরাজ্যের শিকারে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বাঙালির কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এখনো কৌতূহলের বিষয় হিসেবেই বিবেচিত। গোড়া থেকেই বাঙালি অভিজাতশ্রেণি বাংলা ভাষাকে তাদের শ্রেণিগত স্বার্থে অবজ্ঞা করে আসছে। এই অবজ্ঞা নতুন নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজও তা অব্যাহত রয়েছে। জনগণের মঙ্গলার্থে প্রয়োগের চেষ্টা করেনি বা আজও করছে না। তারা যেমনি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় রাষ্ট্রকে মহাসংকটে নিপতিত করেছে, তেমনি ভাষাকেও। বাংলা ভাষার যে সংকট, তা মূলত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরই সংকট। প্রকৃত অর্থে শাসকশ্রেণির নিজেদেরই সংকট।
ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে বাঙালির বিশেষভাবে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের কাল। এ মাসকে কেন্দ্র করেই বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, জ্ঞান সাধনার ফলটুকু এই জাতির মননচর্চাকারীরা গ্রন্থাকারে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে চর্চার ওই নদীপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করছে মেধাহীনরা। এদের সঙ্গী বই ব্যবসায়ীরা। কথা ছিল বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার নেতৃত্বটা থাকবে বাংলা একাডেমির হাতে। রয়েছেও সেখানেই। কিন্তু বাণিজ্যের আক্রমণে বইমেলার অনেকটা এখন জ্ঞানপিপাসু তরুণদের বদলে বিনোদনপ্রিয় তরুণদের দখলে চলে গেছে।
দরকার ছিল গ্রন্থাগার আন্দোলনের। পঞ্চাশ বছরেও তা আর গড়ে উঠল না। আন্দোলনের পেছনে থাকে মহৎ উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য আজ হারিয়ে গেছে। তাই আন্দোলনও নেই। প্রয়োজন ছিল সৃষ্টিশীল বইয়ের বাজার সৃষ্টি। তা আর হলো কই। নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেননা, ভাষা আন্দোলনের মাতৃভূমি তো হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কাঁটাবনের যে পশু-পাখির বাজার, সেখানে গেলে অরণ্যচারী, আকাশচারী পশুপাখির বন্দিশালা চোখে পড়ে। বন্দিদশায় মুক্তির আশায় তাদের চিৎকার, আর্তনাদ শোনা যায়। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে অতীতে মুক্তির গান শুনিয়েছে, তারই জমিন কাঁটাবন স্বাধীন প্রাণীদের জেলখানায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল সেখানে বইয়ের বাজার হবে। তা আর হলো না।
অন্য সবকিছুর মতো বইয়েরও বিপণন চাই। তার জন্য প্রতিটি শহরে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বিপণনকেন্দ্র গড়ে তোলা। লোকে জানবে বই কোথায় পাওয়া যায়। সেখানে যেমন শিক্ষার্থীরা যাবে, তেমনি যাবে গ্রন্থপ্রেমীকেরাও। জানা থাকবে যে সেখানে গেলে কেবল বই নয়, বইয়ের খবরও পাওয়া যাবে। কোনো কর্তৃপক্ষেরই এদিকে খেয়াল নেই, বই তো ভোগ্যপণ্য নয় যে মানুষ বাধ্য থাকবে কিনতে; বইয়ের মূল্য যতই বৃদ্ধি পাক। প্রকাশকেরা বইকে মুনাফার উপাদানে পরিণত করেছেন সাধারণ পাঠকের ক্রয়ের সীমাকে তোয়াক্কা না করেই। মুদ্রণ ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সেখানে সরকারের দেখভাল করা দরকার ছিল। অথচ সরকার ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয়, বইয়ের বেলায় নয়। ব্যাংক প্রকাশনা খাতে ঋণ দেয় না। উচিত ছিল বই প্রকাশ আর বিপণনের বিষয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। দরকার ছিল কাগজ আমদানি, মুদ্রণযন্ত্র আমদানির বেলায় ট্যাক্স মওকুফ করা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলা বানানরীতি। এটি নিয়ে নানা হইচই হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাজন নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমি প্রমিত রীতির কথা বলেছে। সংবাদপত্রগুলোও একক কোনো রীতি মানছে না। পাঠ্যপুস্তকেরও একই দশা। ভাষা একটি অথচ তার বানানরীতিতে ঐক্য নেই। এটা হচ্ছে ভাষার ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা কার্যকর করা খুবই জরুরি।
বাংলা ভাষার দুর্দশাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখ মেললেই। টিভির পর্দা, দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পণ্যের বিজ্ঞাপন—সবকিছুতেই বাক্য আর বানানে ভুলের ছড়াছড়ি। এতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারেরও নেই কোনো দায়। আসলে অর্থনীতিতে, সমাজে, পারিবারিক জীবনে আজ যে নৈরাজ্য চলছে, বাংলা ভাষার দুর্দশা তারই অংশ।
মানুষের জীবনে ভাষা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে তো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভাষার ব্যবহার না থাকলে মানুষ মানুষ থাকে না, তার আত্মপ্রকাশের পথ যায় রুদ্ধ হয়ে, আত্মপরিচয় অবলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে, আত্মসম্মান যে বৃদ্ধি পাবে, সে আশা বজায় থাকে না। ভাষা তো কেবল ওপরকাঠামোর অংশ নয়। তার যোগ অবকাঠামোর সঙ্গেও। শিক্ষা, দক্ষতা, যোগাযোগ—কোনো কিছুই বৃদ্ধি পায় না ভাষার অনুশীলন ভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান, বাংলা ভাষা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা। তদুপরি বিশ্বের ছাব্বিশ-সাতাশ কোটি মানুষের সে মাতৃভাষা। বাংলাকে উপেক্ষা করার মতো অন্যায় কাজ আমাদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। কেবল ফেব্রুয়ারি নয়, বছরজুড়েই আমাদের ভাষাচেতনা অক্ষয় থাকুক ও শক্তিশালী হোক।
২. জনমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি অতি পুরোনো প্রশ্ন, কিন্তু তার আবির্ভাব নিত্যনতুন এবং অব্যাহত। প্রশ্নটার তো মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কথা, কেননা জনমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন বস্তু এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র কল্পকাহিনি মাত্র। আমাদের এই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দায়িত্ব হওয়ার কথা আইন প্রণয়ন, সরকারের নির্বাহী অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন, সরকারকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সরকারি নির্বাহী কার্যক্রমের স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রের বৈদেশিক চুক্তি ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। কিন্তু আমাদের সংসদে এসব কাজ যে প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে, এমনটা বলার কোনো সুযোগই নেই।
সংসদে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, উত্তেজনা যে সৃষ্টি হয় না, তা-ও নয়; কিন্তু জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সেখানে ভীষণ অনীহা দেখা যায়। জাতীয় সংসদে সম্প্রতি জনমাধ্যমের কার্যকলাপের যে কঠিন সমালোচনা কয়েকজন সদস্য করেছেন, তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলেছে, সেটি আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ঘটনাটি বেদনাদায়ক বটে, অপ্রত্যাশিতও বৈকি; তবে একে যে অস্বাভাবিক বলা যাবে, তা নয়। কেননা, আমাদের শাসকশ্রেণি সমালোচনার স্পর্শ মাত্র সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, এ ব্যাপারে তারা বড়ই স্পর্শকাতর। এর কারণ হচ্ছে তারা নৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। এটা তাদের জানাই আছে যে তারা নানা ছলচাতুরীতে ক্ষমতায় এসেছে এবং যখন ক্ষমতা তাদের কোনো অংশের একচ্ছত্র হয়ে পড়ে, তখনো এটা তাদের অজানা থাকার কথা নয় যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থই শুধু দেখে, জনগণের স্বার্থ নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। সমালোচনার আওয়াজ শুনলেই তারা খেপে ওঠে, ভাবে তাদের বুঝি পতন ঘটবে।
ওদিকে এরা নিজেরা নানা ধরনের আওয়াজ তোলে। কেউ বলে দিনবদল ঘটিয়ে তবে ছাড়বে, কেউ বলে তাদের উন্নয়নের বন্যায় ভেসে লোকে আনন্দে নৃত্য করবে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তারা চায় সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকে স্তব্ধ করে দিতে। কেউ যদি প্রতিবাদী আওয়াজ তোলে তাহলে তার গলা চেপে ধরতে উদ্যত হয়। কণ্ঠরোধের এই কাজটাই তারা করতে চায়, যে জন্য জনমাধ্যমের ওপর বিষোদ্গার করাটা তাদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। তাদের ভঙ্গিটা এ রকমের যে আমরা যেহেতু রাষ্ট্রশাসনের অধিকার পেয়ে গেছি, তাই আওয়াজ যা দেওয়ার আমরাই দেব, অন্যরা তা শুনবে। এসব ধ্বনি আবার আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। তারা নিজেরা ধ্বনি দেবে এবং সেই ধ্বনি সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হবে, এটাই তাদের কামনা।
তবে সরকারি দল যে সব সময় এক গলায় কথা বলে, তা নয়। ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর শোনা যায়। যেমন মন্ত্রীদের একজন বলেছিলেন যে তাঁরা দ্রব্যমূল্যকে কবজার ভেতর নিয়ে আসতে পারবেন। কেননা, সরকারি টিসিবিকে তাঁরা আবার চালু করবেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক মন্ত্রী আওয়াজ দিয়েছেন, না, তা নয়, আমরা মুক্তবাজার চালু রাখব। বাজারই দাম নামিয়ে আনবে। ফলে টিসিবি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে এবং দাম মোটেই নামেনি।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা থাকাটা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস বলছে, এখানে কোনো বিরোধী দলই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সরকারপক্ষ থেকে বাধা এসেছে, বিরোধী দলের নিজের মধ্যেও সেই নৈতিক জোরটা দেখা যায়নি, যার ওপরে ভর করে রুখে দাঁড়াবে; তদুপরি জনগণের কাছে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা থাকে, তা-ও নয়। এ ক্ষেত্রে সমালোচনা যেটুকু পাওয়া যায় তা আসে জনমাধ্যমের কাছ থেকেই। তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া আর একনায়কত্ব কায়েমের ভেতর বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না।
জনমাধ্যমকে যখন সবাক ও নির্বাক উভয় প্রকারের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, তখন বর্তমান সরকারই আবার সংসদে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস করেছে। এই আইনের উদ্দেশ্য হবে জনগণকে ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন। এমন বৈপরীত্য আমাদের দেশের বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, এ ক্ষেত্রেও যে দেখা যাচ্ছে সে আর বিচিত্র কী! এই আইন প্রণয়নের পেছনে অবশ্য তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ছিল। অনুমান করা অন্যায় হবে না যে সরকার যখন সমালোচনার যেকোনো ধ্বনিকেই অসহ্য মনে করে, তখন এই আইন নামে থাকবে, কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না।
শাসকশ্রেণি স্বেচ্ছায় জনগণকে ক্ষমতাবান করা দূরে থাক, জনমাধ্যমে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো রকম প্রকাশকেই সহ্য করবে না। সহ্য যাতে করে তার জন্য চাপ প্রয়োগ দরকার হবে। আর সেই চাপটা যে দুটি জায়গা থেকে আসতে পারে—তাদের একটি হচ্ছে ওই জনমাধ্যম নিজে এবং অপরটি, যেটি আরও জরুরি, সেটি হলো বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ। দ্বিতীয়টি গড়ে ওঠা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রথমটি, অর্থাৎ জনমাধ্যম, দ্রুতই নিজেকে সংগঠিত করে তুলতে পারে যদি জনমাধ্যমের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হন। সাংবাদিকের ঐক্য পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, যে জন্য কোনো সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠত। সেই ঐক্যটা এখন আর নেই। শাসকশ্রেণি সাংবাদিক ও জনমাধ্যমের কর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে, আর এ জন্যই জনমাধ্যম এখন অতটা বিপন্ন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে