নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে বেশ কিছু স্থানে সহিংসতার ঘটনা আতঙ্ক তৈরি করেছিল ভোটারের মনে। সেসব সহিংসতার জের পিছু ছাড়েনি গতকাল রোববার ভোটের দিনেও। চারঘাটে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় এক ব্যক্তিকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে।

নৌকায় ভোট দেওয়া হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ব্যালট পেপারটি নৌকার এজেন্টদের দেখিয়ে বাক্সে ফেলতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক ভোটার। আবার অনেক কেন্দ্রে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি।

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে রাজশাহীর চারঘাটের ছয়টি, দুর্গাপুরের ছয়টি ও বাঘার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদে গতকাল ভোট হয়। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়।

উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় মোতালেব মণ্ডল (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আরও অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।

আহত মোতালেব মণ্ডলের নাতি আশা আক্তার বলেন, ‘আমার নানা আর আমি একসঙ্গে ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। কেন্দ্রের বাইরে বের হতেই নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের লোকজন আমার নানাকে এলোপাতাড়ি চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে। স্থানীয় লোকজন ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলে তাঁরা পালিয়ে যান। নানাকে উদ্ধার করে প্রথমে চারঘাট ও পরবর্তীকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।’ এ সময় আরও দুজন আহত হন।

তবে শলুয়া ইউনিয়নের নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ কোপানোর ঘটনায় তাঁর কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।

এদিকে শলুয়া ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্র দখল করার অভিযোগে প্রায় ৩০ মিনিট বন্ধ ছিল ভোট গ্রহণ। কেন্দ্র দখলের ছবি তোলায় দৈনিক আজকের পত্রিকার চারঘাট প্রতিনিধি সনি আজাদসহ দুজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করা হয়।

শলুয়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ভোটার সোহেল রানা (৩০) বলেন, ‘আমার পরিবারের লোকজন ভোটকেন্দ্রই যেতে পারেনি। সকালে এবং দুপুরে দুবার ভোট দিতে গেলেও কয়েকজন হাঁসুয়া ও লাঠি হাতে বাধা দিয়ে রাস্তা থেকেই ফেরত পাঠিয়েছেন।’

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়তি রানী কৈরী জানান, ভোট দেওয়ার সময় একজন ভুয়া ভোটারকে আটক করে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নে সামান্য ঝামেলা হয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অভিযোগে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২১ জনকে আটক করেছে।

ঝালুকা ইউনিয়নের বর্ধনপুর ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আকতার আলীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাহার আলী মণ্ডলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোট শুরুর পরই দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের নামোদরখালী গ্রামের ভোটকেন্দ্রে ভোটদানে বাধা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আহসান হাবিবের সমর্থকেরা। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে। পরে এ নিয়ে দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে রিয়াজুল ইসলামের চার কর্মী আহত হন। ওই ইউনিয়নের বখতিয়াপুর ভোটকেন্দ্রেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনদের ভোটদানে বাধা দেন নৌকাসমর্থক কর্মীরা। এ নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক কর্মী আহত হন। তিনিও রিয়াজুল ইসলামের কর্মী।

দুপুরে নওপাড়া ইউনিয়নের শিবপুর ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলামের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল আলমের সমর্থকদের ভোট দিতে বাধা দেন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল আলমের তিন কর্মী আহত হন।

বাঘা উপজেলার বাউসা বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদস্য প্রার্থী আখের উদ্দিন ও সোহেল রানার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের বাইরে দুপক্ষের আধা ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। দুপক্ষই লাঠিসোঁটা নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।