ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে চারবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এবং দুইবার স্বতন্ত্র। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে একটি নাম—বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। যদিও পরে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে এমপি হন সাত্তার।

আগামী নির্বাচনেও আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া প্রার্থী হবেন বলে এলাকায় আলোচনায় আছেন। প্রার্থী হলে তিনিই হবেন নির্বাচনে আলোচনার মূল ‘নায়ক’। তবে তিনি কোন দল থেকে মনোনয়ন নেবেন কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবেই নির্বাচন করবেন কি না, তা নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা। এসব জল্পনার ফাঁকে আসনটিকে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কবজায় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে থেমে নেই বিএনপি। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, বিএনপি নির্বাচনে এলে এবার লড়াইটা বেশ জমবে।

উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএনপি থেকে আর মনোনয়ন চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শতভাগ সমর্থন পেয়েছি। তাই দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে ডাকলে সমর্থন জানাব এবং মনোনয়ন চাইব। আর স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করব কি না, তা পরে বোঝা যাবে। আরও তো প্রায় আট মাস সময় আছে।’

আশুগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকলেও সরাইল উপজেলায় দলীয় কোন্দলের কারণে কিছুটা দুর্বল দলটি। বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত আসনটি নিজেদের কবজায় নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচন সামনে রেখে দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পর উপজেলা কমিটিও গঠন করেছে। দলটির অবস্থান আগের চেয়ে অনেকটা শক্তিশালী হয়েছে।

আওয়ামী লীগ থেকে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার ছেলে ও সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তানবির হোসেন কাউছার, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব শাহজাহান আলম সাজু এবং সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি নির্বাচনে গেলে নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি মো. মোবারক হোসেন, সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান লস্কর তপু, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা শেখ মোহাম্মদ শামীম, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান (বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃত) আবু আসিফ আহমেদ, জেলা বিএনপির সদস্য আক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ দে এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আহসান উদ্দিন খান শিপন মনোনয়ন চাইতে পারেন।

জাতীয় পার্টি থেকে দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমানে রওশন এরশাদ গ্রুপের নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ভাসানী মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা-কর্মী।

এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট থেকে সাবেক এমপি মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, জাকের পার্টি থেকে জহিরুল ইসলাম জুয়েল এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে মো. রাজ্জাক হোসেন মনোনয়ন চাইবেন।

নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন করছি। দলীয়ভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে আমি এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে জয়লাভে শতভাগ আশাবাদী ইনশা আল্লাহ।’

আওয়ামী লীগের মাহবুবুল বারী মন্টু মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’