আবির হাকিম, ঢাকা
রাজধানীতে নিয়মিত রাইড শেয়ারিং সেবা নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান। থাকেন আজিমপুরে। ১৩ অক্টোবর আলাপকালে এই সেবা নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। ইমাম হাসান বলেন, অধিকাংশ সময়েই রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) দিলেও বাইক পেতে অনেক সময় লাগে। আবার গন্তব্য পছন্দ না হলে সেটা বাতিল করে দেন চালক। ফলে বাধ্য হয়ে চুক্তিতে রাইড শেয়ার করতে হয়।
ইন্দিরা রোডে বসবাসরত এক নারী কর্মকর্তা (সরকারি) উবারের গাড়ি ব্যবহার করেন নিয়মিত। ১৭ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকেরা একের পর এক রিকোয়েস্ট বাতিল করে। কোনো কোনো চালক অ্যাপের বাইরে টাকা চায়। এ কারণে একবার বাধ্য হয়ে রিকোয়েস্ট বাতিল করলাম। এতে আমার জরিমানা হলো।’
বনশ্রী এলাকার শাহ আলম চাকরি করেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। ১৩ অক্টোবর তিনি বলেন, অ্যাপে আর চুক্তিতে যাওয়া বাইক রাইডারদের মাঝে অনেক পার্থক্য। অ্যাপের চালকেরা চুক্তিতে যাওয়া বাইকচালকদের থেকে অনেক সচেতন।
শুরুর দিকে স্বস্তি প্রকাশ করলেও সেবার গুণগত মান খারাপ হতে থাকায় দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। ১৩ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের নানা অভিযোগ। এসবের মধ্যে আছে চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত টাকা দাবি, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চাহিদামতো গন্তব্যস্থলে যেতে না চাওয়া, গন্তব্যস্থল জানার পর তা পছন্দ না হলে অনুরোধ বাতিল করা ইত্যাদি। তবে যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মোটরসাইকেলচালকদের সরবরাহ করা হেলমেট নিয়ে। তাঁরা জানান, বেশির ভাগ হেলমেট নিরাপদ তো নয়ই, দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পুলিশি ঝামেলা এড়াতেই কেবল ওগুলো দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ অনুমোদন দেয় ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। সে বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হলে সেটি কার্যকর হয় ৩ মার্চ থেকে। কিন্তু কার্যকর হয় সামান্যই। একপর্যায়ে বাইক ও গাড়িচালকেরা ইচ্ছেমতো যাত্রী আনা-নেওয়া শুরু করেন। এমনকি অনেক চালক অ্যাপে না গিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী সংগ্রহ করে পছন্দমতো ভাড়ায় পরিবহন করতে থাকেন। ফলে নীতিমালা জারি হওয়ার আড়াই-তিন বছরের মাথায়ই কার্যত অকার্যকর হয়ে যায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা। কোম্পানির নিবন্ধন থেকে শুরু করে ডিমান্ড চার্জ, ভাড়া এবং অন্যান্য নিয়মেও রয়েছে ভিন্নতা। চার বছরেও এ খাতের কোম্পানিগুলোকে অভিন্ন নিয়মের মধ্যে আনতে পারেনি বিআরটিএ।
নীতিমালায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অহরহ ঘটছে যাত্রী হয়রানিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। বেশি লাভের আশায় অ্যাপ ছাড়াই চুক্তিভিত্তিক ট্রিপ মারেন চালকেরা।
বিআরটিএর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা এবং কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি না থাকায় ভোগান্তি কমানোর এ সেবা উল্টো ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাইড শেয়ারে বিআরটিএর নিজস্ব কোনো অ্যাপ নেই। থাকলে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের সেবা সেখান থেকে দিতে পারত। এখন প্রত্যেকেই আলাদা অ্যাপ থেকে সেবা দিচ্ছে। তাই বিআরটিএর পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কেন্দ্রীয় অ্যাপ থাকলে বিষয়টি আমাদের ও পুলিশের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সহজ হতো।’
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, উবার, পাঠাও, সহজসহ ১৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্তির সনদ পায় রাইড শেয়ারিং কার্যক্রম চালাতে। এর মধ্যে ‘উবার’-এর প্রায় দুই লাখ চালক রাজধানীতে এ সেবা দিচ্ছেন। আরেকটি জনপ্রিয় বাইক রাইডিং ‘পাঠাও’য়ের আছে দেড় লাখের বেশি রাইডার। এ ছাড়া রাজধানীতে ‘সহজ’, ‘ওভাই’ ইত্যাদির আওতায় আছে আরও প্রায় ৫০ হাজার রেজিস্টার্ড গাড়ি। কিন্তু চালকদের চেনার জন্য নেই আলাদা কোনো ইউনিফর্ম বা পোশাক। তাঁদের তদারকিতেও কোনো কার্যক্রম নেই বিআরটিএর। এসব কারণেই এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিআরটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা।
বিআরটিএর রাইড শেয়ারিং কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব কোম্পানি রাইড শেয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারা নীতিমালার আলোকে নিজেরাই ভাড়াসহ অন্যান্য ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করছে। এ ক্ষেত্রে একই নিয়মের মধ্যে আনার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিই।’
‘অ্যাপে পোষায় না’
গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দাবি, অ্যাপ কোম্পানির দেওয়া টাকায় তাঁদের পোষাচ্ছে না। বিভিন্নভাবে টাকা কেটে নেওয়ার পর যা থাকে, তাতে জ্বালানির খরচই ওঠে না। তাই বাধ্য হয়েই অ্যাপ ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন তাঁরা। সাইফুল ইসলাম নামের এক চালক বলেন, ‘রাইড শেয়ার করে যা টাকা পাই, তার শতকরা ২৫ ভাগ কেটে নেয় কোম্পানি। জ্বালানি খরচ, ইন্টারনেট ও ফোন খরচ, আবার এক কিলোমিটার দূর থেকে কাস্টমারকে পিক করার খরচ—এসব মেলালে আ্যপে গিয়ে কোনো লাভ থাকে না।’
অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পাঠাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘কিছু অসাধু রাইডার বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য চুক্তিতে ট্রিপ দিয়ে থাকে। ইউজারদের একটি অংশ সচেতনতার অভাবে এ সেবা নেয়। এতে নিরাপত্তার সংকট তৈরি হয়।’
দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে হেলমেট
বাইকচালকদের দেওয়া হেলমেট নিয়ে অভিযোগ সব যাত্রীর। চাকরিপ্রত্যাশী এক তরুণী গত শুক্রবার বলেন, ‘এসব হেলমেট মাথায় দিলে মাথা দুর্গন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় ওই হেলমেট পরার পর কোথাও গেলে দুর্গন্ধে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। চালকেরা শুধু পুলিশি ঝামেলা থেকে বাঁচতেই নিম্নমানের এসব হেলমেট ব্যবহার করেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী।
চালক আশরাফুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি ভালো হেলমেট দিতে। কিন্তু রাস্তায় পার্কিং করলে ট্রাফিক পুলিশ হেলমেট নিয়ে যায়। অনেক সময় যাত্রীরাও নষ্ট করে ফেলে। এ কারণে কম দামি হেলমেট ব্যবহার করতে হয়।’
কোম্পানিগুলোর দাবি
কোম্পানিগুলো বলছে, যাত্রীদের নিরাপত্তাকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। উবার বাংলাদেশের গণমাধ্যম সমন্বয়ক আফসার কাইসার জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁরা চালকদের বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। অনিয়ম হলে চালকদের জন্য শাস্তির বিধান আছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত চালকদের অ্যাপটির ব্যবহার শেখানো হয়। তারপর নেভিগেশন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন এবং কাস্টমারকে কীভাবে ভালো সার্ভিস দেওয়া যায়, সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’
কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার তাগিদ
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের কঠোরতা না থাকায়ই রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো চার্জ আদায় করে। আবার চালকেরা যাত্রীদের হয়রানি করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলেও সব চালককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা কঠিন, কিন্তু কোম্পানিগুলোকে একটা নিয়মের মধ্যে আনলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’
বিআরটিএর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
এ সেবা নিয়মের মধ্যে আনার ক্ষেত্রে বিআরটিএর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই ধরনের একটা প্রযুক্তিনির্ভর সেবার মানদণ্ড ঠিক রাখতে যে ধরনের মনিটরিং, এনফোর্সমেন্ট এবং আইটি রিলেটেড পেশাদারি লোক দরকার, তার কিছুই বিআরটিএর নেই। সবার আগে তাদের সক্ষম হতে হবে। পাশাপাশি চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণও দরকার।’
রাজধানীতে নিয়মিত রাইড শেয়ারিং সেবা নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান। থাকেন আজিমপুরে। ১৩ অক্টোবর আলাপকালে এই সেবা নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। ইমাম হাসান বলেন, অধিকাংশ সময়েই রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) দিলেও বাইক পেতে অনেক সময় লাগে। আবার গন্তব্য পছন্দ না হলে সেটা বাতিল করে দেন চালক। ফলে বাধ্য হয়ে চুক্তিতে রাইড শেয়ার করতে হয়।
ইন্দিরা রোডে বসবাসরত এক নারী কর্মকর্তা (সরকারি) উবারের গাড়ি ব্যবহার করেন নিয়মিত। ১৭ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকেরা একের পর এক রিকোয়েস্ট বাতিল করে। কোনো কোনো চালক অ্যাপের বাইরে টাকা চায়। এ কারণে একবার বাধ্য হয়ে রিকোয়েস্ট বাতিল করলাম। এতে আমার জরিমানা হলো।’
বনশ্রী এলাকার শাহ আলম চাকরি করেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। ১৩ অক্টোবর তিনি বলেন, অ্যাপে আর চুক্তিতে যাওয়া বাইক রাইডারদের মাঝে অনেক পার্থক্য। অ্যাপের চালকেরা চুক্তিতে যাওয়া বাইকচালকদের থেকে অনেক সচেতন।
শুরুর দিকে স্বস্তি প্রকাশ করলেও সেবার গুণগত মান খারাপ হতে থাকায় দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। ১৩ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের নানা অভিযোগ। এসবের মধ্যে আছে চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত টাকা দাবি, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চাহিদামতো গন্তব্যস্থলে যেতে না চাওয়া, গন্তব্যস্থল জানার পর তা পছন্দ না হলে অনুরোধ বাতিল করা ইত্যাদি। তবে যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মোটরসাইকেলচালকদের সরবরাহ করা হেলমেট নিয়ে। তাঁরা জানান, বেশির ভাগ হেলমেট নিরাপদ তো নয়ই, দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পুলিশি ঝামেলা এড়াতেই কেবল ওগুলো দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ অনুমোদন দেয় ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। সে বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হলে সেটি কার্যকর হয় ৩ মার্চ থেকে। কিন্তু কার্যকর হয় সামান্যই। একপর্যায়ে বাইক ও গাড়িচালকেরা ইচ্ছেমতো যাত্রী আনা-নেওয়া শুরু করেন। এমনকি অনেক চালক অ্যাপে না গিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী সংগ্রহ করে পছন্দমতো ভাড়ায় পরিবহন করতে থাকেন। ফলে নীতিমালা জারি হওয়ার আড়াই-তিন বছরের মাথায়ই কার্যত অকার্যকর হয়ে যায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা। কোম্পানির নিবন্ধন থেকে শুরু করে ডিমান্ড চার্জ, ভাড়া এবং অন্যান্য নিয়মেও রয়েছে ভিন্নতা। চার বছরেও এ খাতের কোম্পানিগুলোকে অভিন্ন নিয়মের মধ্যে আনতে পারেনি বিআরটিএ।
নীতিমালায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অহরহ ঘটছে যাত্রী হয়রানিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। বেশি লাভের আশায় অ্যাপ ছাড়াই চুক্তিভিত্তিক ট্রিপ মারেন চালকেরা।
বিআরটিএর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা এবং কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি না থাকায় ভোগান্তি কমানোর এ সেবা উল্টো ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাইড শেয়ারে বিআরটিএর নিজস্ব কোনো অ্যাপ নেই। থাকলে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের সেবা সেখান থেকে দিতে পারত। এখন প্রত্যেকেই আলাদা অ্যাপ থেকে সেবা দিচ্ছে। তাই বিআরটিএর পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কেন্দ্রীয় অ্যাপ থাকলে বিষয়টি আমাদের ও পুলিশের পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সহজ হতো।’
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, উবার, পাঠাও, সহজসহ ১৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্তির সনদ পায় রাইড শেয়ারিং কার্যক্রম চালাতে। এর মধ্যে ‘উবার’-এর প্রায় দুই লাখ চালক রাজধানীতে এ সেবা দিচ্ছেন। আরেকটি জনপ্রিয় বাইক রাইডিং ‘পাঠাও’য়ের আছে দেড় লাখের বেশি রাইডার। এ ছাড়া রাজধানীতে ‘সহজ’, ‘ওভাই’ ইত্যাদির আওতায় আছে আরও প্রায় ৫০ হাজার রেজিস্টার্ড গাড়ি। কিন্তু চালকদের চেনার জন্য নেই আলাদা কোনো ইউনিফর্ম বা পোশাক। তাঁদের তদারকিতেও কোনো কার্যক্রম নেই বিআরটিএর। এসব কারণেই এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিআরটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা।
বিআরটিএর রাইড শেয়ারিং কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব কোম্পানি রাইড শেয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারা নীতিমালার আলোকে নিজেরাই ভাড়াসহ অন্যান্য ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করছে। এ ক্ষেত্রে একই নিয়মের মধ্যে আনার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিই।’
‘অ্যাপে পোষায় না’
গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দাবি, অ্যাপ কোম্পানির দেওয়া টাকায় তাঁদের পোষাচ্ছে না। বিভিন্নভাবে টাকা কেটে নেওয়ার পর যা থাকে, তাতে জ্বালানির খরচই ওঠে না। তাই বাধ্য হয়েই অ্যাপ ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন তাঁরা। সাইফুল ইসলাম নামের এক চালক বলেন, ‘রাইড শেয়ার করে যা টাকা পাই, তার শতকরা ২৫ ভাগ কেটে নেয় কোম্পানি। জ্বালানি খরচ, ইন্টারনেট ও ফোন খরচ, আবার এক কিলোমিটার দূর থেকে কাস্টমারকে পিক করার খরচ—এসব মেলালে আ্যপে গিয়ে কোনো লাভ থাকে না।’
অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পাঠাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘কিছু অসাধু রাইডার বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য চুক্তিতে ট্রিপ দিয়ে থাকে। ইউজারদের একটি অংশ সচেতনতার অভাবে এ সেবা নেয়। এতে নিরাপত্তার সংকট তৈরি হয়।’
দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে হেলমেট
বাইকচালকদের দেওয়া হেলমেট নিয়ে অভিযোগ সব যাত্রীর। চাকরিপ্রত্যাশী এক তরুণী গত শুক্রবার বলেন, ‘এসব হেলমেট মাথায় দিলে মাথা দুর্গন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় ওই হেলমেট পরার পর কোথাও গেলে দুর্গন্ধে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। চালকেরা শুধু পুলিশি ঝামেলা থেকে বাঁচতেই নিম্নমানের এসব হেলমেট ব্যবহার করেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী।
চালক আশরাফুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি ভালো হেলমেট দিতে। কিন্তু রাস্তায় পার্কিং করলে ট্রাফিক পুলিশ হেলমেট নিয়ে যায়। অনেক সময় যাত্রীরাও নষ্ট করে ফেলে। এ কারণে কম দামি হেলমেট ব্যবহার করতে হয়।’
কোম্পানিগুলোর দাবি
কোম্পানিগুলো বলছে, যাত্রীদের নিরাপত্তাকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। উবার বাংলাদেশের গণমাধ্যম সমন্বয়ক আফসার কাইসার জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁরা চালকদের বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। অনিয়ম হলে চালকদের জন্য শাস্তির বিধান আছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত চালকদের অ্যাপটির ব্যবহার শেখানো হয়। তারপর নেভিগেশন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন এবং কাস্টমারকে কীভাবে ভালো সার্ভিস দেওয়া যায়, সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’
কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার তাগিদ
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের কঠোরতা না থাকায়ই রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো চার্জ আদায় করে। আবার চালকেরা যাত্রীদের হয়রানি করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’ তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলেও সব চালককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা কঠিন, কিন্তু কোম্পানিগুলোকে একটা নিয়মের মধ্যে আনলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’
বিআরটিএর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
এ সেবা নিয়মের মধ্যে আনার ক্ষেত্রে বিআরটিএর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই ধরনের একটা প্রযুক্তিনির্ভর সেবার মানদণ্ড ঠিক রাখতে যে ধরনের মনিটরিং, এনফোর্সমেন্ট এবং আইটি রিলেটেড পেশাদারি লোক দরকার, তার কিছুই বিআরটিএর নেই। সবার আগে তাদের সক্ষম হতে হবে। পাশাপাশি চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণও দরকার।’
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৪ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে