সেচকাজের সুবিধার্থে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে খাল পুনর্খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা বয়রাগাদী ইউনিয়নের বাহেরঘাটা বাজার থেকে গাজীবাড়ি পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের খালটি পুনর্খনন করা হয়। একসময়ের খরস্রোতা খালটি দুপাশের মাটি জমে মরা খালে পরিণত হয়ে ছিল। পানির অভাবে আলু, ধান, পাট, ভুট্টাসহ বিভিন্ন চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষকদের। দীর্ঘদিন পর খালটি পুনর্খনন করায় ও ইউনিয়নবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন।

গত শনিবার বিকেলে সরেজমিনে খাল পুনর্খননের কাজ সম্পন্ন হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। খালটি অনেক দিন ধরেই বেদখল ছিল। সরকার তা উদ্ধার করে পুনর্খনন করায় স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর মাঝে নতুন স্বপ্ন জেগে উঠেছে। তারা এ খালে আগের মতো পানি সেচকাজে ব্যবহার ও মাছ ধরে খেতে পারবে। এ ছাড়া এলাকাবাসীর গৃহপালিত পশুর গোসলসহ নানা কাজে আসবে এ খাল।

জানা যায়, এই উপজেলায় ছোট-বড় ২০টি খাল ছিল, তা এখন দখল-দূষণ আর পানিসংকটে পড়েছে। আবার অনেকে হাসপাতাল, অফিস ও বাড়ি নির্মাণের জন্য যাতায়াতের পথ তৈরি করতে গিয়ে খালের অংশ ভরাট করছে। অনেকে মাছের চাষ করছে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের ওপর পুরোনো সেতু ভেঙে নতুন সেতু করার সময় অস্থায়ীভাবে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে। তবে সেতু নির্মাণ শেষে সেই সড়কের মাটি ঠিকমতো অপসারণ না করায় সময়মতো পানি প্রবাহিত হতে পারে না।

উপজেলা বিএডিসির অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের খালটি পুনর্খননের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রিয়াঙ্কা এন্টারপ্রাইজ। দুটি ভেকুর মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালটি খনন করে। খাল খননের মাটি সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এ মাটি দিয়ে সড়ক উন্নয়ন ও খালের পার মেরামত করা হয়।

গোবরদী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে হলেও খালটি পুনর্খনন করা হয়েছে। এখন মরা খালে পানি ফিরে আসছে। এতে আমাদের অনেক উপকার হবে। খালটির নাব্যতা-সংকটের কারণে চাষাবাদে ব্যাপক কষ্ট হতো। তবে খাল খনন হওয়ায় পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে ভবিষ্যতে জমিতে বছরজুড়ে ফসলে ভরে থাকবে। কৃষকের মুখেও হাসি ফুটবে।’

কৃষক ইলিয়াস বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর খালটি খনন করা হয়েছে। এখন খালে অনেকটা সময় পানি থাকবে। এতে আমাদের দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে আলু ও ধান জমিতে দিতে হবে না। এখন কাছেই পানি পাওয়া যাবে।’

কৃষকেরা জানান, খালটি খনন করায় সারা বছর পানি থাকবে খালে। এতে কৃষকের অনেক উপকার হবে। এই খাল থেকে আলু, ধান, পাট, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে সেচকাজে সুবিধা হবে।

বয়রাগাদী ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম হাবিবুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হয়ে আসার পর এই খাল খনন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি এবং খালটি অবশেষে খনন হয়েছে। এতে করে আমাদের ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক অনেক উপকৃত হবেন। এ ছাড়া খালের পাশের বাসিন্দাদেরও অনেক কাজে আসবে। এতে লাভবান হবে এই ইউনিয়নের বাসিন্দারাই।’

এ বিষয়ে উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মমিন বলেন, বর্তমান সরকার দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সেচকাজের জন্য খালগুলো খনন করছে। তারই অংশ হিসেবে বয়রাগাদী ইউনিয়নের বাহেরঘাটা বাজার থেকে গাজীবাড়ি পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের খালটি পুনর্খনন করা হয়। খাল খননের ফলে এই এলাকার চাষিদের আলু, ধানসহ বিভিন্ন চাষে আর পানির সমস্যা থাকবে না। এ ছাড়া খাল খনন হওয়ায় ইউনিয়নবাসী অনেক উপকৃত হবে।