ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে ১২টা ছুঁই ছুঁই। প্রসববেদনায় ছটফট করা শারমিন আকতারকে (২৭) নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। চালক বেলাল হোসেন এক হাতে কানে মোবাইল ফোনসেট আর এক হাতে ধরেছেন স্টিয়ারিং। বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকের আলোর কারণে দেখতে না পেয়ে সামনে থাকা রিকশাভ্যানকে দিলেন ধাক্কা। এ সময় অটোরিকশা উল্টে সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন শারমিনসহ আরও তিন যাত্রী।

গত সোমবার আজকের পত্রিকাকে এসব কথা বললেন অটোরিকশায় থাকা শারমিনের খালাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম।

আশরাফুল আরও বলেন, ‘এ সময় পেছন দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস শারমিনকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে পেট ফেটে নবজাতক (কন্যাশিশু) ভূমিষ্ঠ হয়। মাইক্রোবাসের বাম্পারে আটকে যায় শারমিনের কাপড়। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি, দ্রুতগতির মাইক্রোবাসটি আমার বোনকে প্রায় দুই কিলোমিটার টেনে নিয়ে সৈয়দপুরের ঢেলাপীর নামক স্থানে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।’

গত শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের সংগলশী ইউনিয়নের শিমুলতলী নামক স্থানে। প্রসববেদনা ওঠায় শারমিনকে অটোরিকশায় সৈয়দপুর শহরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্রুতগতির অটোরিকশাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ওই স্থানে সামনের একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায়। এ সময় পেছন দিক থেকে একটি মাইক্রোবাস চাপা দিলে নিহত হন শারমিনসহ ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তান। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন শারমিনের সঙ্গে থাকা মেয়ে ইলমা মনি (৫), মা কোহিনূর বেগম ও খালাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম। তাঁদের প্রথমে নীলফামারী আধুনিক হাসপাতালে এবং পরে মনি ও কোহিনূরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ডোমার পৌরসভার চিকনমাটি এলাকার কাচারি পাড়ার নাজিম উদ্দীনের মেয়ে শারমিন আখতার। আট বছর আগে সৈয়দপুর উপজেলার ধলাগাছ আবাসনের হায়দার আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম লিটনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। লিটন সৈয়দপুর শহরে দরজির কাজ করেন। দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর শারমিন ডোমারে মায়ের কাছে অবস্থান করছিলেন। শনিবার রাতে প্রসববেদনা উঠলে তাঁকে সৈয়দপুরের একটি ক্লিনিকে নেওয়া হচ্ছিল।

সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশিদ আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করেন উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নবজাতকটিকে যেখানে পাওয়া গেছে, সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাওয়া গেছে মায়ের ছিন্নভিন্ন লাশ।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) নাজমুল হুদা বলেন, রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বাচ্চাটিকে এখানে নিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বাচ্চাটির মাথায় আঘাত ছিল। শরীর ছিল রক্তাক্ত। তাকে এখানে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়।

শারমিনের লাশের সুরতহাল করা সৈয়দপুর থানার উপপরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, মাইক্রোবাসের ধাক্কায় প্রসূতির পেট ফেটে গিয়ে নবজাতক ঘটনাস্থলে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।

এদিকে নিহত শারমিনের চাচা আজিম উদ্দীন রোববার রাতে নীলফামারী সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় মাইক্রোবাসের অজ্ঞাতনামা চালককে আসামি করা হয়েছে।