পর্যটকশূন্য পাহাড়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ১৬
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ৩৪

চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তার রেশ এখনো রয়েছে। এর মধ্যেই ধর্ষণের অভিযোগে ১ অক্টোবর শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এতে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক আরও বেড়েছে; যার প্রভাব পড়েছে পর্যটনশিল্পেও।

শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চার দিনের ছুটি থাকলেও হোটেল-মোটেলগুলোয় বুকিং নেই। পর্যটক না থাকায় রুমগুলোও ফাঁকা পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও হামলার প্রতিবাদে ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনের অবরোধে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে পর্যটকেরা আটকে পড়েন। ২৪ সেপ্টেম্বর সাজেকে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে খাগড়াছড়িও প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। সেই থেকে এখানে চলছে পর্যটনে খরা। এদিকে শহরের রেস্তোরাঁগুলোয় নেই বেচাবিক্রি। রেস্তোরাঁমালিকেরা জানান, পর্যটকশূন্যতায় তাঁদের প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। কর্মী কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোটেলমালিকদের গত দুই সপ্তাহে কয়েক কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পর্যটন খাত টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক হোটেলে স্টাফও কমানো হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে সহিংসতার পর গত দুই সপ্তাহে খাগড়াছড়িতে কোনো পর্যটক আসেননি। সামনে পূজার ছুটিতেও ৩৫টি হোটেল ফাঁকা। বুকিং নেই। অথচ এ সময় পর্যটকমুখর থাকার কথা। ব্যবসায়ীরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্র আলুটিলা, রিসাং ঝরনা, জেলা পরিষদ পার্কসহ কোনো কেন্দ্রেই পর্যটক নেই। স্থানীয়রাও বের হচ্ছে না।

আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের টিকিট কাউন্টার ম্যানেজার কোকোনাথ ত্রিপুরা জানান, গত দুই সপ্তাহে কোনো পর্যটক নেই। সাজেক বন্ধ থাকার প্রভাবও পড়েছে।

জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, ১৫ দিন ধরে জেলা পরিষদ পার্কে পর্যটক নেই।

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, পর্যটকেরা আগাম বুকিং বাতিল করেছেন। সাধারণত নভেম্বরের শুরু থেকে পর্যটকের চাপ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার অস্থিরতার কারণে পর্যটক কেমন হবে, বোঝা যাচ্ছে না।

এদিকে সাজেকে পর্যটনকেন্দ্রের পরিস্থিতি আরও নাজুক। ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সেখানেও কোনো পর্যটক নেই। সাজেকে ১২০টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। ৪০টির বেশি রেস্তোরাঁ থাকলেও নেই কোনো বিক্রি।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ‘আমাদের যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তা বলে বোঝানোর মতো না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ৩ দিন করে ৯ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন তা অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটকেরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, তেমন একটা পরিবেশ আমরা তৈরি করছি।’

চলতি বছরের জুলাই মাসজুড়ে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আগস্টে সরকার পতনকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই মাস পাহাড়ে পর্যটনে ভাটা ছিল। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটক সমাগম বাড়ছিল। এর মধ্যেই ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ ছাড়া ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নতুন করে সহিংসতা হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বেড়েছে। চলমান অস্থিরতা কেটে গেলে আবার এ শিল্প চাঙা হবে বলে মনে করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত