নওগাঁ-৩: বিভেদে ঘোলাটে ভোটের মাঠ

সিয়াম সাহারিয়া, নওগাঁ
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ১১: ৩২

নওগাঁ-৩ আসন নিয়ে আলোচনা হলেই নান্নুর নাম আসবে। বিএনপির এই নেতার পুরো নাম আখতার হামিদ সিদ্দিকী। মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে গড়া এই আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হন তিনি। সে সময় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু গত তিন নির্বাচনে আসনটি তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যায়। এর মধ্যে দুবার ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। এবারও এই আসনে জিততে তৎপর দলটি। তবে নেতাদের মধ্যে কোন্দল সে ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছলিম উদ্দীন তরফদার এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগে শক্তিশালী দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তাঁদের একজন সাবেক সংসদ সদস্য আকরাম হোসেন চৌধুরী, অপরজন সাবেক সিনিয়র সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী।

দল নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির নেতা ফজলে হুদা বাবুল, রবিউল আলম বুলেট এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা-কর্মী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন চৌধুরী।

ভোটের মাঠে ঘুরে জানা যায়, সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে কৌশলে লবিং ও তৎপরতা শুরু করেছেন। স্থানীয় লোকজন ও নেতা-কর্মীরা বলছেন, বড় দুই দলেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভেদ স্পষ্ট। এ কারণে তৈরি হয়েছে গ্রুপিং। এই অবস্থায় ঘোলাটে নির্বাচনী মাঠে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন নেতারা। ফলে মনোনয়নযুদ্ধ তীব্র হয়ে উঠেছে।

২০০৮ সালে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের আকরাম হোসেন চৌধুরীর দখলে। এরপর ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ছলিম উদ্দীন তরফদার নির্বাচিত হন। আসনটি একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হলেও আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিক পরিধি বাড়াতে তৎপর। তবে জাতীয় পার্টি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক তৎপরতা সংকটাপন্ন। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে আসনটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আকরাম হোসেন ও এমপি ছলিম উদ্দীনের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। এর মধ্যেই মনোনয়ন দৌড়ে যুক্ত হয়েছেন সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। ইতিমধ্যে তিনি নিজের অবস্থানও পাকাপোক্ত করেছেন বলে দাবি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বদলগাছীতে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠ গুছিয়ে নিয়েছি। দলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন।আমি মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে চলেছেন। তাঁর দাবি, বর্তমান এমপি ছলিম উদ্দীন তরফদার জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন।

বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমান এমপি ছলিম উদ্দীনও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের প্রত্যাশার বাইরেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে।’

বিএনপির নেতা ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর মৃত্যুর পর বিভক্ত বিএনপির বড় এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ফজলে হুদা বাবুল এবং অপর পক্ষে আছেন রবিউল আলম বুলেট। আরেফিন সিদ্দিকী জনিও আলোচনায় আছেন। এ ব্যাপারে ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। তবে যেহেতু দল করি, দল যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে হয়তো যেতে হবে। তাঁর দাবি, দলে কোনো কোন্দল নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন বলেও শতভাগ আশাবাদী।

বিএনপির নেতা রবিউল আলম বুলেট বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। বড় দলে ছোটখাটো গ্রুপিং থাকেই। এখানেও আছে।’ ভোটাররা বলেন, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের উপস্থিতি তেমন নেই। প্রার্থীরা যেহেতু মাঠে নেই, তাই এ মুহূর্তে বলা মুশকিল, কাকে নির্বাচিত করবেন। তবে যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবেন বলে জানান তাঁরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত