প্রযুক্তির প্রতারণা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭: ২৩

বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আবিষ্কার আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত আমাদের জীবন স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলছে। মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে।

কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু দুষ্টপ্রকৃতির মানুষের কারণেই প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে প্রযুক্তির ফলভোগী ব্যক্তিরা এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ রকম এক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায়। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ‘ভাতাভোগীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলার দুস্থ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার টাকা একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা না পেয়ে সমাজসেবা অফিস ও মোবাইল ব্যাংকিং শাখায় যোগাযোগ করে কোনো সমাধান পাননি উপকারভোগীরা। খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত একটি মোবাইল নম্বর থেকে ভাতাভোগীদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাঁদের কাছে হিসাব নম্বরের পিন কোড ও ওটিপি নম্বর চাওয়া হয়। এলাকার সহজ-সরল মানুষেরা সমাজসেবা কর্মকর্তা ভেবে প্রতারকদের তাঁদের পিন কোড ও ওটিপি নম্বর দিয়ে দেন। এরপরই প্রতারক চক্র ওই ভাতাভোগীদের টাকা হাতিয়ে নেয়।

একটি রাষ্ট্র যেমন তার আইন দিয়ে জনগণের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষা করে, তেমনি সমাজেরও কিছু নিয়ম ও বিধিবিধান থাকে। প্রতিটি সমাজ নিজস্ব আচার-ব্যবহার, ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায় বিবেচনাবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়; যা সেই সমাজের শত বছরের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নির্মিত। মানুষ নিয়েই তো সমাজ গঠিত হয়। সমাজের সব মানুষই ভালো হয় না, কিছু খারাপ প্রকৃতির লোক অবস্থান করে থাকে। এরা সমাজকে কলুষিত করে থাকে তাদের অপকর্ম দ্বারা।

বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুস্থ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের সহযোগিতার জন্য সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করেছে। এসব ভাতা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দুস্থদের হিসাবে পাঠানো হচ্ছে। তাঁদের ভাতার টাকা বিভিন্ন মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যক্তির কাছে চলে যাচ্ছে। সরকার মূলত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে পাঁচ কোটি মানুষকে প্রতি মাসে ভাতা দিচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় এক লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও প্রতি মাসে উপবৃত্তি পাচ্ছেন।

সরকার থেকে এই উদ্যোগ নেওয়ার ফলে লাখ লাখ দুস্থ ও অসহায় মানুষ উপকার পাচ্ছেন। কিন্তু মানুষরূপী কিছু প্রতারকের কারণে অসহায় মানুষেরা তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা কি শুধু দৌলতপুরে হয়েছে? পত্রিকার মাধ্যমে দেশের আরও অনেক জায়গায় এ ধরনের ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাই এই প্রতারণার কুশীলবদের প্রযুক্তির জ্ঞান দিয়েই চিহ্নিত করা সম্ভব।

কথায় আছে, ‘মানুষ ঠকে শেখে।’ ভুক্তভোগীরা হয়তোবা এ থেকে শিক্ষা নেবেন। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তরের উচিত হবে, এখন থেকে এ বিষয়ে উপকারভোগীদের সচেতন করে দেওয়া। একই সঙ্গে যেকোনো উপায়েই হোক প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত