৯ প্রাণ ঝরার পর টনক নড়েছে প্রকৌশলীর

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ১০: ১৮

নয়টি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর টনক নড়েছে বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার ২০টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে সতর্কীকরণ নোটিশ বোর্ড টাঙানো হয়েছে, দেওয়া হয়েছে বেড়া। ভেঙে যাওয়া হলদিয়া হাট সেতুতেও নতুন করে নোটিশ ও বেড়া দেওয়া হয়েছে।

আমতলী উপজেলায় গত শনিবার বউভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে একটি মাইক্রোবাস ও একটি অটোরিকশায় বর চিকিৎসক সোহাগের বাড়ি যাচ্ছিলেন কনের বাড়ি লোকজন। পথে চাওড়া ইউনিয়নের হলদিয়া বাজার এলাকায় হলদিয়াহাট সেতু পার হওয়ার সময় সেতুটি ধসে পড়ে। মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাটি নদীতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় চার শিশু-কিশোরসহ ৯ জন মারা যায়। 

দুর্ঘটনার পর সেতুর ঠিকাদারের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। দুর্ঘটনার চার দিনের মাথায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোয় নোটিশ বোর্ড ও বেড়া দিল উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আমতলী উপজেলার ২০০৭-০৮ অর্থবছরের পর ২০টি লোহার সেতু নির্মাণ করে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে হলদিয়া হাট সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের পিলার ভেঙে যায়। ১০ বছর ধরে ওই ভাঙা সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন, চাওড়াসহ উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে।

হলদিয়াহাট সেতুসহ ওই ২০টি সেতু নির্মাণে অনিয়ম করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছিলেন। সেতুগুলোয় রেলপাটির বিম বসানোর কথা থাকলেও ঠিকাদারেরা সাধারণ বিম বসিয়ে নির্মাণ করেছেন। এই ঠিকাদারদের মধ্যে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধাও রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারেরা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা সেতু নির্মাণ করে টাকা তুলে নেন। অল্প দিনের মধ্যেই সেতুগুলোর লোহার বিম অকেজো হয়ে যায়। সেতুগুলো হয়ে ওঠে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিত, তাহলে এভাবে অকালে ৯টি তাজা প্রাণ ঝরে যেত না। কাউনিয়া গ্রামের জিয়া উদ্দিন জুয়েল, নজরুল ইসলাম ও দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, ৯টি প্রাণনাশের পরে টনক নড়েছে উপজেলা প্রকৌশলীর। তিনি সেতুর মাঝখানে পিলার গেড়ে দিয়েছেন, যাতে যানবাহন চলাচল করতে না পারে। এই পিলার আগে দিলে শনিবারের দুর্ঘটনাটি ঘটত না। তাঁর অবহেলার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

এ প্রসঙ্গে হলদিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেছেন, ‘এই ভাঙা সেতু (হলদিয়া হাট সেতু) মেরামতের জন্য বহুবার জানিয়েছি, কিন্তু আমলে নেওয়া হয়নি। ঠিকাদারের দায়সারা সেতু নির্মাণ করায় এবং উপজেলা প্রকৌশলী সেতু সংস্কার না করায় তাঁদের শাস্তির দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার ২০টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুতে সতর্কীকরণ নোটিশ ও বেড়া দেওয়া হয়েছে। আগে কেন সতর্কীকরণ নোটিশ ও বেড়া দেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগেই নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু স্থানীয়রা সরিয়ে ফেলেছেন।’

বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোকে সতর্কীকরণ নোটিশ ও ব্যারিকেড দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্থায়ীভাবে ব্যারিকেড দেওয়ার, যাতে ভারী যানবাহন সেতুতে না উঠতে পারে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত