চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার প্রধান ও ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ড্রেজারের পাইপলাইন স্থাপন করে বছরের পর বছর বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচলসহ ভোগান্তিতে পড়ছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। এ ছাড়া সড়কের ওপর দিয়ে বালু সরবরাহের পাইপলাইনগুলো স্থাপনের কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধ সড়ক ও জনপদ বিভাগের আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে একাধিক স্থানে পাইপলাইন টানা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও একই চিত্র দেখা গেছে।

জানা যায়, সড়কের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে স্থাপন করা এসব পাইপ লাইন দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও পুকুর ভরাটসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের কাজে এসব লাইন দিয়ে বালু সরবরাহ করা হয়। সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে প্রায় এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে ইটের সুরকি, বালু ইত্যাদি দিয়ে পাইপগুলো ঢেকে ডাইভারশন তৈরি করার কারণে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, ইজিবাইক, রিকশা, পিকআপভ্যান, মোটরসাইকেল, জরুরি ওষুধ ও পণ্যবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে।

এভাবে বছরের পর বছর রাস্তার ওপরে যত্রতত্র পাইপলাইনগুলো থাকলে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা—এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের ঠেটালিয়া গ্রামের মন্নান মিয়া জানান, পাইপ লাইনের ওপরে গাড়ি উল্টে গুরুতর আহত হয়ে তাঁর ডান পা ভেঙে যায়। বাম পা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায়। বর্তমানে তাঁর বাম পায়ের ভেতরে রড স্থাপন করা। মানুষের নিকট থেকে আর্থিক সাহায্য ও জমিজমা বিক্রয় করে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলেও তিনি কোনো ভারী কাজকর্ম করতে পারেন না।

উপজেলার দশানী এলাকার বাসেদ মিয়া জানান, ২০২০ সালে বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় বেড়িবাঁধ রোডে বালু সরবরাহের উঁচু পাইপলাইনের ওপর মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। এতে তার ডান হাতে ফ্র্যাকচার হয়, মুখের চামড়া উঠে যায় এবং ডান পায়ে গুরুতর জখম হয়ে চার মাস কোনো কাজ করতে পারেননি।

অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি চালক এনামুল হক জানান, আমরা কোনো দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হুইসিল বাজিয়ে যখন দ্রুতগতিতে দুর্ঘটনাস্থলে যাই তখন স্থানে স্থানে এসব পাইপলাইনের কারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন, জনস্বার্থ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় এখন থেকে সকল ব্যবসায়ীকে অনুমতি নিয়ে ডাইভারশন প্রস্তুত করতে হবে। ডাইভারশনগুলোর উভয় পাশে স্পষ্ট দৃশ্যমান সাইনবোর্ড, নির্দেশনা, প্রতীকী চিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদিসহ যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডাইভারশন প্রস্তুতের ব্যাপারে নির্দেশ দেব। প্রয়োজনে বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।