আর পচবে না পেঁয়াজ-সবজি

মো. মফিজুর রহমান, ফরিদপুর
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২২, ০৬: ৪১
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১২: ৩৭

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। এই সেতুতেই বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষি অর্থনীতির চিত্র। কৃষিপণ্যের নিরাপদ ও সহজ পরিবহন কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে; এমনটি প্রত্যাশা ফরিদপুরবাসীর।

পাট ও পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে ফরিদপুর। জেলার মোট ১ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে পাটের মৌসুমে ৮৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পাট চাষ হয়। এই জেলায় উৎপাদিত যায় সারা দেশের পাটকলগুলোতে। তেমনি পেঁয়াজ, সবজি, পেঁয়াজের বীজ, ধানসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় পাঠানো হয়।

মধুখালীর মরিচচাষি হাফিজুর রহমান বলেন, তাঁরা মরিচ খেত থেকে তুলে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেন। সেতুটি চালু হলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।

একই উপজেলার সবজিচাষি কামাল মাতুব্বর বলেন, মৌসুমি সবজি উৎপাদন বেশি হলে দর কমে যায়, কারণ হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী থাকেন। পদ্মা সেতুর কারণে মধুখালীতে ঢাকাসহ আশপাশের ব্যবসায়ীরা সহজে পণ্য কিনতে চলে আসবে। এতে তাঁরা ভালো দাম পাবেন।

জেলার কানাইপুর এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে ফরিদপুরে চাষিদের সুনাম রয়েছে। বছরে এ জেলায় সরকারি হিসাবে ৫ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। জেলার চাহিদা রয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন, বাকি পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়েছে। সেতু চালু হলে এই বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজের পরিবহন খরচ কমবে, পাশাপাশি পরিবহনে সময়ও কম লাগবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইসতিয়াক আরিফ বলেন, পদ্মা সেতু সব মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য করা হয়েছে। এখন দক্ষিণবঙ্গে উৎপাদিত পাট, পেঁয়াজ, সবজি, ধান, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য চাষিরা ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারবেন। অন্যদিকে এই পণ্য তুলনামূলক কম দামে ভোক্তার হাতে পৌঁছাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে চাষিরা সরাসরি তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে পারায় লাভবান হবেন। ফলে বদলে যাবে চাষিদের ভাগ্য, সমৃদ্ধ হবে কৃষি অর্থনীতি।

ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালুর ফলে জেলার পাট ও পেঁয়াজচাষিরা সরাসরি লাভবান হবেন। সদরপুরের ফল ও সবজিচাষি এবং মধুখালীর মরিচচাষিরাও সেতুর সুফল পাবেন। এ জেলার নয়টি উপজেলার চাষিদের উৎপাদিত ফসল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে খরচ ও সময় বাঁচবে। এতে লাভবান হবেন চাষি ও ভোক্তা।

তিনি আরও বলেন, জেলায় উৎপাদিত পচনশীল মসলাজাতীয় পণ্য প্রান্তিক চাষিদের বাধ্য হয়ে অনেক সময় কম দামে বিক্রি করতে হতো, যা আগামী মৌসুম থেকে আর করতে হবে না। পদ্মা সেতু দিয়ে সহজেই রাজধানীসহ পাশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাবে এসব কৃষিপণ্য।

জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে পৌঁছানোর নানা সমস্যার কারণে চাষিরা উৎপাদিত ফসল কম দামে ফড়িয়ার কাছে বা আড়তে বিক্রি করতেন। সেতু চালু হলে চাষিরা নিজ উদ্যোগেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাঠাতে পারবেন।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হজরত আলী বলেন, এই জেলায় বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। যা জেলার চাহিদা পূরণ করার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। পদ্মা সেতু চালুর ফলে জেলার কৃষিপণ্য স্বল্প সময়ে এবং খরচে পরিবহন করা যাবে। এতে চাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ভোক্তারা কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারবেন।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে ফরিদপুরের কৃষি অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে। ভাগ্যের দুয়ার খুলবে এ অঞ্চলের চাষিদের।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত