Ajker Patrika

৭ জানুয়ারির ভোটে বাধা ঠেকাতে ফৌজদারি কৌশল নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ, ইইউর প্রতিবেদন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
৭ জানুয়ারির ভোটে বাধা ঠেকাতে ফৌজদারি কৌশল নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ, ইইউর প্রতিবেদন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ নামাতে যেসব বাধা ছিল, তা দূর করতে কর্তৃপক্ষ ‘ফৌজদারি কৌশল’ কাজে লাগিয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই কৌশলেই গণগ্রেপ্তার ও বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা খুবই সীমিত হয়ে পড়েছিল।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণই তুলে ধরেছে ইইউ।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবেদনটির ছাপা কপি গত বৃহস্পতিবার পেয়েছে কমিশন। যদিও ইইউর একটি সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটির সফট কপি গত ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারের কাছে দেওয়া হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৭ জানুয়ারি। ভোটের আগে-পরে দুই মাস বাংলাদেশে ছিল ইইউর একটি বিশেষজ্ঞ দল। ভোট পরিস্থিতি নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণই তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে এ নির্বাচন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। পুরো নির্বাচনটি হয়েছে অত্যন্ত মেরুকরণকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে। বিরোধী বিএনপি ও তাদের কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের গণগ্রেপ্তারের ফলে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পরিবেশের মারাত্মক অবনতি হয়। দলগুলোর অধিকাংশ বড় নেতা কারাবন্দী হন। অন্য নেতারা গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল নেন। এতে দলগুলোর পক্ষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপি ও তার জোট শরিকেরা নির্বাচন বয়কট করে। এর পরিণতিতে নির্বাচনে সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য সমাবেশ, আন্দোলন ও বক্তৃতার মতো নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা অপরিহার্য। কিন্তু নির্বাচনের পুরো সময় বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ ও আন্দোলনের স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়।

ইইউ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছিল একমাত্র দল, যে বড় সমাবেশ, শোভাযাত্রাসহ নির্বাচনের প্রচারে যেকোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর আসন ভাগাভাগির চুক্তির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা’ প্রতিযোগিতায় ছিলেন। কিন্তু তা ভোটারের স্বাধীন প্রার্থী পছন্দের চাহিদা মেটাতে পারেনি।

এর বাইরে প্রচারে প্রার্থীদের স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক সীমাবদ্ধতা আরোপের পরিণামে ভোটে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের ঘাটতি দেখা দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়, স্থানীয় নির্দলীয় নাগরিক সমাজ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভূমিকাটি পালন করতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষমতা থাকলেও আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তাই সংস্থাটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হয়নি। ইসি ন্যূনতম আইনি এখতিয়ার প্রয়োগ ও ভোটের মালামাল সরবরাহেই নিজের ভূমিকা সীমিত করে ফলে। ব্যালট বাক্স ভর্তি, জালিয়াতিসহ অনিয়মের অভিযোগগুলো মোকাবিলায় ইসি কোমলতা ও কঠোরতার দ্বৈত নীতি অনুসরণ করেছে।

ইইউ বলেছে, অনলাইনের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইনের (২০২৩) অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অযৌক্তিক বিধানগুলো ভোটের সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক সমস্যা তৈরি করে।

নির্বাচন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সম্পর্কিত সব আইন ও বিধিবিধানকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে ব্যাপক পর্যালোচনার সুপারিশ করেছে ইইউ বিশেষজ্ঞ দল।

এর বাইরে নির্বাচন কমিশন গঠনে স্বাধীন নিয়োগব্যবস্থা চালু, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান বাতিল করা, নাগরিক সমাজকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া, ভোট গ্রহণ ও গণনায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে ইইউ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত