হত্যা, ডাকাতি ও মাদক মামলায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা!

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২২, ০৬: ৩৪
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২২, ১১: ১৬

সদ্যঘোষিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আবদুল্লাহ আল মারজান। ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা, নিজ এলাকায় ডাকাতি ও লুণ্ঠন এবং মাদক ব্যবসাসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত মারজানকে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে রাখায় সংগঠনের ভেতরেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৪ জুলাই কেন্দ্র ঘোষিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিতে ৩৩ জনের নাম জানানো হয়। এতে আবদুল্লাহ আল মারজানকে ৪ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। বরগুনা জেলা ছাত্রলীগে মারজানের পদ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক উঠেছে খোদ সংগঠনেই। ছাত্রলীগ নেতারা জানান, মারজানকে কেন্দ্র থেকে পদ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ে সংগঠন ও নেতা-কর্মীরা বিব্রত।

এদিকে ১০ বছর আগে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ছাত্রলীগকর্মী ক্লিনটন মজুমদার টিটু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিকে ছাত্রলীগের বরগুনা জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ ও ছেলের হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে বুধবার মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের মা ও বাবা।

জানা যায়, আবদুল্লাহ আল মারজান বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা নাচনাপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হায়দার হোসেনের ছেলে। মঠবাড়িয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ক্লিনটন মজুমদার টিটু হত্যা মামলার পুলিশ প্রতিবেদনে অভিযুক্ত আসামি মারজান ২০১৮ সালে মঠবাড়িয়া থানার সামনে ১৫টি ইয়াবাসহ আটক হন। এ ঘটনায় ওই থানার মামলা হয়।

পাথরঘাটা থানায়ও ডাকাতি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে চারটি মামলা রয়েছে এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। থানা সূত্র জানায় ২০১৫ সালে পাথরঘাটার কাঁঠালতলী গ্রামের মো. পান্না মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি মারজান। এ ছাড়া গত ইউপি নির্বাচনে প্রচারে বাধা দেওয়া ও হামলার অভিযোগে একটি মামলায় তিনি ১ নম্বর আসামি। একই ইউনিয়নের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদিকা হোসনেয়ারা রানী বাড়ি লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেন।

হোসনেয়ারা রানী অভিযোগ করে বলেন, ‘বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের ছত্রচ্ছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতায় মারজান হত্যা, ডাকাতির মতো জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। রিমনের তদবিরেই ছাত্রলীগ নেতা হয়েছেন।’

বরগুনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মারজান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক। আমি এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে ধরেননি। তবে বরগুনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশিদ রাফি বলেন, ‘জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে তথ্য দিয়েছি।’ তিনি জানান মারজানের নাম কেন্দ্র থেকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজাউল কবির রেজা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে পদসহ ৩৩ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, দ্রুত সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাচানুর রহমান রিমন বলেন, ‘মারজানকে আমি পৃষ্ঠপোষকতা করি এ তথ্য সত্য নয়, যিনি এমন অভিযোগ করেছেন সেই নারী নেত্রী নিজেই জমি দখল করে বাড়ি করেছেন। আমি বাধা দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব বলছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কাকে কোন পদ দেবে, এটা তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত