Ajker Patrika

রাজেশকে খুঁজে নিন

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ৩১ মে ২০২২, ১৫: ৩৮
রাজেশকে খুঁজে নিন

‘আমি মনে হয় আর কয়েক মাস পরেই মারা যাব।’ বললেন রাজেশ কুমার দাস।

পাশে বসে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ফুলের নামে তাঁর নাম। ডালিয়া। ডালিয়া রাণী রায়। ডালিয়ার চোখে ক্লান্তি আর ভয়।

‘ডা. জাফরুল্লাহ স্যার যদি একটু কাজের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে হয়তো আরও কিছুদিন বাঁচতাম।’ আবার বললেন রাজেশ।

কেন হঠাৎ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা এল, সেটা বুঝতে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো আমাদের। গুলশানের এক অফিসে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল এই দম্পতির সঙ্গে। তাঁদের দেহভাষাই বলে দিচ্ছিল, তাঁরা ভালো নেই।

মাত্র আড়াই বছর আগে যখন বিয়ে হলো তাঁদের, তখন চোখজোড়া স্বপ্ন নিয়ে সংসার শুরু করেছিলেন তাঁরা। সিলেটের বানিয়াচং থানার কাঁঠালিয়া গ্রামে ভালোই কাটছিল দিন। কিন্তু রাজেশের কিডনিটা সমস্যা শুরু করল। সিলেটের ডাক্তার বললেন, ‘ও কিছু না, ওষুধ খাও, ঠিক হয়ে যাবে।’

ওষুধ খেলেন রাজেশ। ঠিক হলো না। বরং কয়েক মাস পরে যখন ডাক্তারের কাছে গেলেন, তখন ডা. শুভার্থী কর বললেন, ‘ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাও। ডায়ালাইসিস লাগতে পারে।’

বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকাপয়সা ধার করে নিয়ে ঢাকায় চলে এল এই দম্পতি। তারপর দেখা গেল, কিডনির অবস্থা এতই খারাপ যে সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করাতে হবে।

ঢাকায় বড় ডাক্তার দেখালেন। মোহাম্মদপুরে শ্যামলীর কাছে একটি হাসপাতালে শুরু হলো ডায়ালাইসিস। প্রথমবার ২ হাজার ৮০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ১ হাজার ৫০০ টাকা করে লাগছিল। এ ছাড়া এই পরীক্ষা, সেই পরীক্ষা, কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ। কিডনি দিতে পারেন মা-বাবা, ভাই-বোন। মা নেই, তাই অন্য তিনজন দেবেন কি না, জানতে গিয়ে বুঝতে পারলেন, সেটা হবে না। নিকটাত্মীয়রা কিডনি দেবেন না।

বাকি রইল বউ। ডালিয়া বললেন, ‘যদি রক্তের গ্রুপ মিলে যায়, আমি দেব কিডনি।’

কিন্তু তাতে আরও ২ লাখ টাকা বাড়তি লাগবে।

কোথায় পাবেন টাকা? অগত্যা চালিয়ে যেতে লাগলেন ডায়ালাইসিস। হাতের টাকা গুনে দেখলেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আছে। এ অবস্থায় এখানে ডায়ালাইসিস করানো যাবে না। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের খবর পেলেন। সেখানে ১ হাজার ১০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করানো যায়। একটু স্বস্তি হলো।

এইটুকু বলার পর রাজেশের কণ্ঠ একটু কাঁপে। তিনি বলেন, ‘আমি এমএ করেছি, এলএলবি করেছি। আমি দেখেছি, জাফরুল্লাহ স্যার অনেক গরিব মানুষকেই ছোটখাটো চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার বিনিময়ে ফ্রিতে ডায়ালাইসিস করান। আমি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো চাকরি করব। আমি আরও একটু বেশি সময় বাঁচতে চাই।’

এতক্ষণে কথাগুলো মনে হয় ডালিয়ার মাথায় ঢোকে। তিনি ক্রন্দনরত স্বামীর দিকে তাকান। সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হাতটা একটু সামনে এগিয়ে যায়। তাতে দমকে দমকে কাঁদতে থাকেন রাজেশ। আর বলতে থাকেন, ‘আর কিছুদিন পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে চাই স্যার। কাজ করেই বেঁচে থাকতে চাই। ভিক্ষা করে নয়। আপনি কি একটু জাফরুল্লাহ স্যারকে বলে দেবেন?’

ডা. জাফরুল্লাহর কাছে আমি পৌঁছুতে পারব না। তবে পাঠকের কাছে পৌঁছুতে পারব, তাঁদের মধ্যে এমন কেউ নিশ্চয়ই আছেন, যিনি হাতের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই মানুষটিকে আরও কয়েক দিন বাঁচার পথ বাতলে দেবেন।

আমার মন বলছে, রাজেশকে তেমন কেউ ঠিকই খুঁজে নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত