খেলার মাঠে পাথর ভাঙা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০৭: ৪৪
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫০

তারাকান্দা উপজেলার একটি স্কুল মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। ফলে খেলাধুলা বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে এসব বিষয়ে জানে না উপজেলা প্রশাসন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, বিদ্যালয় মাঠে সরঞ্জামাদি রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কোনো বিধান নেই।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তারাকান্দার তালদীঘি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-ফুলপুর মহাসড়ক নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথর ও বালুর অনেকগুলো বিশাল স্তূপ। পাশেই চলছে পাথর ভাঙার কাজ। স্কুলের মাঠ থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত সড়কটি ভেঙে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাঠটি লিজ দিয়েছেন।

উচ্চবিদ্যালয়ের পাশেই তালদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল দুটির লাগোয়া একটি বড় খেলার মাঠ। কিন্তু পাথরের বিশাল সব স্তূপের কারণে বোঝাই যাচ্ছে না এটি স্কুলের খেলার মাঠ। প্রায় ১৮ ঘণ্টা নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুতের কাজ চলে সেখানে। উড়ে আসা পাথরের গুঁড়া আর মেশিনের বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

তালদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেন, ‘পাথরের কাজ করার সময় পুরো স্কুলসহ আশপাশের এলাকা ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এতে আমাদের শ্বাসকষ্টসহ সর্দি-কাশি লেগেই থাকে।’

আরেক শিক্ষার্থী মো. সাকিব বলেন, ‘করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা খেলাধুলা করতে পারিনি। এখন স্কুল খোলার পর দেখি স্কুলের মাঠে পাথরের কাজ হচ্ছে। খেলতে না পেরে আমাদের খারাপ লাগে। আমরা চাই দ্রুত আমাদের মাঠ খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।’

তালদীঘি গ্রামের বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, সারা দিন চলে পাথর ভাঙার কাজ। যে কারণে এলাকার মানুষ রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। এ ছাড়া স্কুলের মাঠটি ভাড়া দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খেলার মাঠটি লিজ নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিডেটের (আরবিএল) প্রকল্প পরিচালক মো. সোহেল রানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে গত বর্ষাকালে স্কুলের মাঠটি নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য ভাড়া নেওয়া হয়। তখন স্কুল বন্ধ ছিল। এখন স্কুল খোলা হলেও জুন মাস পর্যন্ত এখানে পাথর ভাঙার কাজ হবে।

ওই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে এক বছরের জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাঠটি ভাড়া দিয়েছি। ভাড়ার টাকা দিয়ে স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আর ভাড়া দেওয়া হবে না।’

পাথার ভাঙার উচ্চ শব্দ শিক্ষার্থীদের জন্য বড় রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাথর ভাঙার গুঁড়া বালু বাতাসে মিশে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের দেখা দিতে পারে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বিদ্যালয় মাঠে রাস্তা নির্মাণের সরঞ্জামাদি রাখা কোনোভাবেই নীতিমালার মধ্যে পড়ে না। তবে দেখতে হবে কীভাবে মাঠটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের মাঠে পাথর ও বালু রাখার বিষয়ে অবগত নয় দাবি করে ইউএনও মিজাবে রহমত বলেন, শিগগিরই খোঁজখবর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত