দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পীরের মেলায় অনুমোদন ছাড়াই চলছে লটারির আসর। লটারি জেতার লোভে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। স্থানীয় সাতোর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন রাজা এই লটারি খেলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মেলায় লটারি বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের বটতলী বাজারে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। পরে সাতোর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তপ্ত জনতাকে শান্ত করেন।

এদিকে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীরা এক হয়ে প্রকাশ্যে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে লটারির টিকিট বিক্রি করছেন। তবে প্রশাসন নিচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।

মেলায় ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের শামুকশাহ জিন্দাপীরের মাজারে ১৯ অগ্রহায়ণ থেকে ওরস শুরু হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও ৫ ডিসেম্বর থেকে মাজার প্রাঙ্গণে শিরনির মধ্য দিয়ে শামুকশাহ জিন্দাপীরের মেলার উদ্বোধন হয়। মেলায় আগত ভক্তরা মাজারে যে টাকা দান করেন তা সরকারি কোষাগারে জমা করে উপজেলা প্রশাসন।

এলাকাবাসী ও মেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সাতোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. জাকির হোসেন রাজা এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন নবী ওয়ার্ড এই মেলা দখলে নিতে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে চেয়ারম্যান নিজে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন।

পরে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই তিনি আকর্ষণীয় অফারে ‘দৈনিক মায়ের দোয়া লাকি কুপন’ নামে ২০ টাকা করে র‍্যাফেল ড্রর টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে মেলা রাত ৮টা পর্যন্ত চলার অনুমতি থাকলেও মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে লটারি।

লটারিতে দেওয়া হচ্ছে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পুরস্কার। সারা দিন মাইকিং করে বীরগঞ্জ পৌর শহরসহ উপজেলার আনাচকানাচে রিকশাভ্যান ও ইজিবাইকে করে দৈনিক প্রায় ২০ লাখ টাকার লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর একটি নির্ধারিত অংশ বরাদ্দ থাকে মেলা কমিটির আয়োজকদের জন্য। জনগণকে আকর্ষণ করতে রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লটারি ড্র হচ্ছে। লটারি ড্রর অনুষ্ঠান ডিশের লাইনের মাধ্যমে স্থানীয় টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

এদিকে, লটারির টিকিট কেনার জন্য এলাকার উঠতি বয়সীরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। উপজেলার শিবরামপুর ইউপির সদস্য সফিউল্লা জানান, লটারি শুরুর পর এলাকায় গরু চুরি বেড়েছে।

মেলা কমিটির সদস্য বিএনপি নেতা মাহামুদুন নবী ওয়ার্ড বলেন, ‘সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই মেলায় লটারি চালানোর কথা সাধারণ সম্পাদকের। তিনি কী করছেন তা আমি জানি না।’ 
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন রাজা বলেন, লটারি বসানোর অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে মেলায় লোকসান হচ্ছিল। সেই লোকসান পূরণ করতে লটারি চালু করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শামুকশাহ জিন্দাপীরের ওয়াক্‌ফ এস্টেটের সভাপতি ও বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিনাত রেহানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেলায় র‍্যাফেল ড্রর নামে কোনো লটারির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’