বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের ইদিলকাঠী গ্রামের পারভেজ মাহমুদ সংযুক্ত আরব-আমিরাতের চাকরিতে ফিরে না গিয়ে দেশেই থেকে যান। এখন ড্রাগন চাষে আশার আলো দেখছেন তিনি।

জানা যায়, এক বছর আগে ২০২১ সালের জুনে ইউনিয়নের আরজি বাহেরচর মৌজায় নিজের ৬৩ শতাংশ জমিতে প্রায় ২ হাজার ৪০০টি ড্রাগনগাছের চারা রোপণ করেন পরভেজ। ইউটিউব ঘেঁটে তিনি ড্রাগন চাষের বিষয়ে বিভিন্ন কলাকৌশল শেখেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে ফুল আসতে শুরু করে তাঁর ড্রাগনগাছে। গত ৯ জুন প্রথমবারের মতো ১০০ কেজি ড্রাগন ফল ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কোনো প্রকার রাসায়নিক ওষুধ ছাড়াই নিজের তৈরি জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করে ড্রাগন চাষ করে সফলতা পাওয়ায় উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর এল আকৃতির ড্রাগন বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। একটি ড্রাগনগাছ বছরে ১০ মাস ফল দেয়। বাগান থেকে কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তাঁর বাগানে ৪টি জাতের বিভিন্ন স্বাদের ড্রাগনগাছ রয়েছে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের পারভেজ মাহমুদ। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। পাশাপাশি একই বাগানে পেঁপে, কচু, বোম্বাই মরিচ, বেগুন, আলু, কচুসহ বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি করছেন। প্রাকৃতিকভাবে পরাগায়নের জন্য বাগানে স্থাপন করা হয়েছে মৌমাছির কৃত্রিম বাসা। এ ছাড়া শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য কৃত্রিমভাবে ড্রাগন ফুলের পরাগায়ন করা হয়। পাশেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি চাইনিজ কমলা ও পেয়ারাবাগান। বাগানে দুজন দিনমজুর প্রতিদিন কাজ করেন।

পারভেজ মাহমুদ জানান, ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশেই একটি কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান। ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরে আসেন। পরে বিদেশে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ড্রাগনবাগানের সূচনা করেন। নিজের ৬৩ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলেন ড্রাগন খামার।

পারভেজ বলেন, ড্রাগন চাষে বিনিয়োগ একটু বেশি হলেও এখান থেকে বড় কিছু করা সম্ভব। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ না গিয়ে দেশেই কর্মসংস্থান তৈরি করে নেওয়া উচিত।

দেহেরগতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, পারভেজ মাহমুদের ড্রাগনবাগান সবার নজর কেড়েছে। তাঁকে দেখে শিক্ষিত বেকারদের শেখা উচিত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষে এই উপজেলায় প্রথম পারভেজ মাহমুদ উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তিনি সফলভাবে ফল বাজারজাত করেছেন। তাঁর বাগান পরিদর্শনে গিয়ে অভিভূত হয়েছি। কৃষি অফিস থেকে তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি পারভেজ মাহমুদের বাগান দেখে অনেকেই ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন।