দেশে ২৫ শতাংশ নিরক্ষর

রাহুল শর্মা, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ২৮
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ৩৭

সরকারি হিসাবে প্রতি বছরই বাড়ছে সাক্ষরতার হার। এরপরও দেশের সাত বছরের বেশি বয়সের প্রায় পৌনে তিন কোটি মানুষ নিরক্ষর। বিপুল এ জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করতে আপাতত তেমন কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের।

বিবিএসের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের নাগরিকদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেই হিসাবে নিরক্ষর ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ মানুষ।

বিবিএসের ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বলছে, দেশে এখনো নিরক্ষর প্রায় পৌনে তিন কোটি মানুষ।

জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়তে চায় বাংলাদেশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও সাক্ষরতা অর্জনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু এসব লক্ষ্য অর্জনে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। এমন বাস্তবতায় আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার’ (ট্রান্সফরমিং লিটারেসি লার্নিং স্পেস)।

সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, সাক্ষরতা বলতে শুধু অক্ষরজ্ঞান বা স্বাক্ষর করতে পারা নয়। সাক্ষরতা বলতে মাতৃভাষায় পড়তে পারা, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারা, যোগাযোগ স্থাপন করতে পারা এবং গণনা করতে পারা বোঝায়।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের মতে, সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি আছে, তবে তা আশাব্যঞ্জক নয়। আজকের পত্রিকাকে কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু যাঁরা এ ধরনের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করেন, তাঁদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। তাঁদের জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সরকারের শিগগির এ বিষয়ে জোরদার কর্মসূচি নেওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার ১৯৭১ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, ১৯৯০ সালে ৩৫.৩ শতাংশ, ২০১০ সালে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২০ সালে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই হিসাবে নিরক্ষরতার হার ছিল ১৯৭১ সালে ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ, ১৯৯০ সালে ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১০ সালে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

 সাক্ষরতা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মু. নুরুজ্জামান শরীফ বলেন, সার্বিক সাক্ষরতা প্রকল্প দুই ভাগে বিভক্ত। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের সাক্ষরতা প্রদানের প্রকল্প চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়েছে। এখন আপাতত কার্যক্রম নেই। আর ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের জন্য একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কেন বিবিএসের ২০২০ সালের তথ্য ব্যবহার করছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই ২০২০ সালের বিবিএসের তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ২০২১ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিষয়ে আলাদা করে পরিসংখ্যান রয়েছে, যা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে নেই।

দেশে এখনো প্রায় পৌনে তিন কোটি মানুষ নিরক্ষর, এই তথ্য জানিয়ে ব্যুরোর অন্য এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২৫) করার সময় দেশে বয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে এই জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করার  লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর কর্মসূচির তেমন অগ্রগতি ছিল না।

তিনি বলেন, করোনার কারণে সাক্ষরতা কার্যক্রমে স্থবিরতা আসায় দেশে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এ সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। আর এতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

বিবিএসের ২০২০ এবং ২০২২ সালের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর হারের কিছু তারতম্য থাকলে মোট নিরক্ষর মানুষের সংখ্যায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না বলেও জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, বয়স্কদের সাক্ষরতার বিষয়ে সরকার নতুন করে ভাবছে। দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো ব্যবহার করে ব্যাপক পরিসরে এ কার্যক্রম চালানো যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত