অলৌকিক তেঁতুলের গ্রাম

মো. মাহবুব-উল-আহসান উল্লাস, খোকসা (কুষ্টিয়া) 
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ০৮: ৫৭

লাল তেঁতুলের কথা শুনেছেন কি? পাকলে তেঁতুলের রং হয় হালকা খয়েরি। কিন্তু হিজলাবট গ্রামের মানুষ বুক ফুলিয়ে বলবে, ‘তেঁতুলের রং লালও হয়। আসুন আমাদের গ্রামে। দেখিয়ে দেব।’ ঠিকই পড়েছেন। হিজলাবট গ্রামটিই এ দেশের একমাত্র গ্রাম, যেখানে কালের সাক্ষী হয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তিনটি তেঁতুলগাছ এবং সেগুলোতে লাল রঙের তেঁতুল ধরে থোকায় থোকায়। তেঁতুলের রং লাল সেটা নিশ্চিত হলেও গ্রামটির বয়স কত? সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রামের বয়স তাঁদের কল্পনার শেষ সীমানায় নিয়ে যেতে চান। এর কারণও আছে।

খোকসা উপজেলা সদর থেকে গড়াই নদ পেরোলেই হিজলাবট গ্রাম। ‘হিজলাবট’ নামটি শুনলে বা পড়লেই মনে হবে, চিনি উহারে। কেন চিনি? তার অনেক গল্প আছে। সেসব গল্পে যাওয়ার আগে এ গ্রামের পথে পথে একটু হেঁটে ঘুরেফিরে আসা যাক।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হিজলাবট গ্রামটি আর দশটি গ্রামের মতো নয়। গড়ন এক হলেও গালগল্পে আর ইতিহাসে কিছুটা অন্য রকম তো বটেই। ইট বিছানো আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই পাশে গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো ছড়িয়ে আছেই। এর পথে পথে ছড়িয়ে আছে গল্প। সে গল্পের গরু কখনো গাছে ওঠে তো কখনো জলে ডোবে। গল্পের সেসব গরু খোঁজার আগে গ্রামটিকে চিনে নেওয়া যাক। গড়াই নদের তীরে ৪টি পাড়া নিয়ে গঠিত হিজলাবট নামের এই গ্রাম। এই পাড়াগুলো হলো দাশপাড়া, মধ্যপাড়া, পুকুরপাড়া ও ব্রিক ফিল্ড। গ্রামে ১২৭ পরিবারে প্রায় ৮৫৫ জন মানুষ বসবাস করে। গড়াই নদসহ গ্রামটির আয়তন আড়াই বর্গকিলোমিটার। তবে নদ বাদে দেড় বর্গকিলোমিটার। অব্যাহত নদভাঙনের ফলে গ্রামটির ঘরবাড়ি ও অধিকাংশ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে।

গ্রামটির আছে অতীত ইতিহাস। গ্রামের মধ্যে আছে প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইংরেজদের আমলে নির্মিত নীল কুঠি। কথিত আছে, ইংরেজ আমলে এখান থেকে কুমারখালী ও খোকসা অঞ্চলের নীল চাষ পরিচালনা করা হতো। দুইতলা এই ভবনটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এই ভবনটির পাশে রয়েছে পাশাপাশি ৩টি তেঁতুলগাছ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই তেঁতুলের বীজ থেকে চারা হয় না। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট এলাকায় এক পীরের মাজারে এমনই একটি গাছ আছে বলে জানা যায়। শোনা যায়, সেটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। হিজলাবট গ্রামের স্থানীয় মানুষের ধারণা, নদীয়া থেকে সে পীরের কোনো মুরিদ খোকসার হিজলাবটে এই লাল তেঁতুলগাছের চারা এনে লাগান।

হিজলাবটে অলৌকিক লাল তেঁতুল নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, গাছটির বয়স ৩০০ বছর কিংবা তারও বেশি। তাঁদের ধারণা, বাংলাদেশের প্রাচীন তেঁতুলগাছ এগুলো। বটগাছের মতো বিশালাকার একেকটি তেঁতুলগাছ। আকারে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট ব্যাসার্ধ ও উচ্চতায় প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ফুট। রঙের ভিন্নতার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিস্ময়কর এই লাল তেঁতুল দেখতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত