Ajker Patrika

১৪টিতেই নৌকার পরাজয়

শাহীন রহমান, পাবনা 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৫
১৪টিতেই নৌকার পরাজয়

চতুর্থ ধাপে গত রোববার পাবনার তিনটি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ১৪টিতেই বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নৌকার প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ৪টিতে। বেসরকারি ফলাফল জানার পর নৌকার এমন ভরাডুবি নিয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

সাধারণ মানুষ, তৃণমূলের নেতা-কর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন-বাণিজ্য করে প্রার্থী মনোনয়নের সুপারিশ করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যাঁদের মনোনয়নে সুপারিশ করেছেন, তাঁরা জনগণ ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, নৌকা প্রতীক পাওয়া মানেই জয় নিশ্চিত। এ ছাড়া দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও জেলার নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও নৌকার এই ভরাডুবির কারণ।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, পাবনা সদরের নয়টি ইউপির সব কটিতেই হেরেছেন নৌকার প্রার্থীরা। জিতেছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আটঘরিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউপির মধ্যে নৌকা জিতেছে মাত্র দুটিতে, বাকি তিনটিতে বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতেছেন। ভাঙ্গুড়া উপজেলার চারটি ইউপির মধ্যে দুটিতে নৌকা ও দুটিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতেছেন। তবে নৌকার প্রার্থীরা হেরেছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা সদরের অধিকাংশ ইউপির ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় নেতাদের দায়িত্ব থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই দ্বিতীয়, তৃতীয় অবস্থানসহ হতাশাজনক ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। এতে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টি ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। একই দলের একাধিক প্রার্থী স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় দলীয় প্রতীকের ভোটে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়েছে। এতে নৌকার পরাজয় হয়েছে।

দলীয় প্রতীক নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেও তাঁদের পরাজয়ের কারণ কী জানতে চাইলে কয়েকজন প্রার্থী বলেন, নিজ দলের লোকদের অসহযোগিতার কারণেই তাঁরা পরাজিত হয়েছেন।

সদরের দাপুনিয়া ইউপির নৌকার প্রার্থী আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার সঙ্গে যাঁরা নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরা আমার সঙ্গে আছেন বলেছিলেন, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে বিপক্ষে কাজ করেছেন। পরাজয়ের জন্য অন্য কেউ নয়, নিজের দলের লোকেরাই দায়ী।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পাবনা জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মতীন খান বলেন, নৌকার এমন ভরাডুবির অন্যতম কারণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। সবাই ক্ষমতা হাতে পেতে চান, আর বিদ্রোহী প্রার্থীরাও ফ্যাক্টর ছিলেন।

মনোনয়ন-বাণিজ্য হয়নি দাবি করে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, পরাজয়ের একাধিক কারণ আছে। প্রার্থী নির্ধারণে কিছুটা ভুল এবং প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার পর দলীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। প্রার্থী নির্ধারণে তাঁরা একটি সাধারণ পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, গত নির্বাচনে যাঁরা চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁদের প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা হয়তো সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে পারেননি।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল বলেন, সদর উপজেলার ৯টি ইউপির সব কটিতে নৌকার পরাজয় নিয়ে তাঁরা নিজেরাও স্তম্ভিত। কেন এ পরাজয় সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এর কারণ খতিয়ে দেখা হবে। জেলা আওয়ামী লীগের পরবর্তী সভায় আলোচনার মাধ্যমে পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করা হবে। তবে শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে ভোটাররা খুব খুশি হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত