Ajker Patrika

নীল-সাদায় শরৎ উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নীল-সাদায় শরৎ উৎসব

ছুটির দিনের ভোরে নগরবাসীর আড়মোড়া ভাঙতে তখনো বাকি। এরই মধ্যে চারুকলার বকুলতলায় হাজির শিল্পীরা। তাঁদের পরনে নীল-সাদা পোশাক। নাচেগানে আর আবৃত্তিতে মেতে উঠল চারুকলা প্রাঙ্গণ। ষড়্‌ঋতুর এই দেশে শরতের আবহ নিয়ে এলেন শিল্পীরা। শুরু হলো ১৮তম শরৎ উৎসব।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে শরৎ উৎসব শুরু হয় গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। উৎসবের সকাল শুরু হয় শিল্পী অভিজিৎ কুণ্ডুর রাগ কোমল ঋষভ আশাবরী দিয়ে। বেলা বাড়তেই শিল্পীরা নাচেগানে আর আবৃত্তিতে ফুটিয়ে তোলেন শরতের আবহ।

নজরুলসংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ পরিবেশন করেন ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক’; শারমিন সাথী ময়না শোনান অতুলপ্রসাদ সেনের ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন দেশে’; রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অণিমা রায় শোনান ‘অমল ধবল পালে’ ও ‘নয়ন ভুলানো এলে’। নবীন শিল্পী শ্রাবণী গুহ রায় শোনান বানি কুমারের ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা শোনান নজরুলের ‘ভোরের ঝিলের জলে শালুক পদ্ম দোলে’।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে হয়ে যায় শরৎকথন পর্ব। প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের দেশের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। ছোটবেলায় যেসব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আমরা দেখেছি, সেগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের লোকজ সংস্কৃতির টানে অনেক দেশের মানুষ এ দেশের গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়ান। আজ সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শরৎ উৎসবের আয়োজন করে সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রয়াস চালিয়েছে। তাদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আপনারাও যে যেখানে থাকবেন, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরবেন।’

বিশেষ অতিথি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ঐতিহ্যপ্রবণ দেশ। বারো মাসে তেরো পার্বণ, ছয় ঋতু। প্রতিটি ঋতুর বৈশিষ্ট্য আবার আলাদা। এর মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। সংস্কৃতির শক্তি অনেক বড়। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু আমাদের মূল শক্তি হলো সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই সম্প্রীতির বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু একটি মহল এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বীর বাঙালি আমাদের সংস্কৃতিকে সবার কাছে তুলে ধরবে এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।’

কথনপর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতির বক্তব্য দেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি নৃত্যশিল্পী অধ্যাপক নিগার চৌধুরী।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দলীয় সংগীত পর্বে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে নজরুলসংগীত ‘নম নম নম বাংলাদেশ মম’ এবং রবীন্দ্রসংগীত ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’; পঞ্চভাস্বরের শিল্পীরা শোনান ‘শরতে আজ কোন অতিথি এলো প্রাণের দ্বারে’। পরে বাফা, সুরবিহারের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে শরতের গান পরিবেশন করেন।

আবৃত্তি পর্বে নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি শোনান নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘কাশবনের কাব্য’। শিশু-কিশোর সংগঠন শিল্পবৃত্তের শিশুশিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় শরৎবন্দনা।

দলীয় নৃত্য পর্বে ‘শরৎ আমার স্নিগ্ধতায় অপরূপ তুমি অনন্যা’ গানের সঙ্গে স্পন্দনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন সম্মেলক নৃত্য। রবীন্দ্রসংগীত ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ হে’ গানের সঙ্গে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন ভাবনার শিল্পীরা। এ ছাড়াও বাফা, নৃত্যাক্ষ, কথক নৃত্য সম্প্রদায়, বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাবের শিল্পীরা সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন।

শরৎ উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্ব শেষ হলে বকুলতলায় শুরু হয় শিশু-কিশোরদের উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ‘শরত ঋতু’। শিশু-কিশোরেরা রংতুলিতে ফুটিয়ে তোলে বাংলার শরতের নানা রূপ।

বিকেলে শুরু হয় একই মঞ্চে উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। শিশু-কিশোরদের দলীয় আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি নগরের তরুণ শিল্পীরা পরিবেশন করেন পঞ্চকবির গান। ছিল দলীয় নৃত্য, সম্মেলক সংগীত এবং একক আবৃত্তি। সবশেষে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে গীতিআলেখ্য ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন: সম্প্রীতির বাংলাদেশ’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

সেনাসদস্যকে এক গাড়ি ধাক্কা দেয়, আরেক গাড়ি পিষে যায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত