ঘরসহ জমি হস্তান্তর করার কথা থাকলেও শুধু দলিল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে উপকারভোগী গৃহহীনদের মাঝে। ৩০টি ঘর না নির্মাণ করেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নথিভুক্ত করে উদ্বোধন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের আবাদপুর গ্রামে।

জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশে ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের কাছে দুই শতক করে খাসজমির দলিল ও ঘর হস্তান্তর কাজের উদ্বোধন করেন। ওই দিন বদলগাছী উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন ঘরের চাবি হস্তান্তর না করে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৩০টি পরিবারের সদস্যদের হাতে শুধু দলিল তুলে দেন। এ সময় ইউএনও ডিসেম্বর মাসে ঘর হস্তান্তর করবেন বলে জানান। জানা গেছে, ওই দিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জমির দলিল হস্তান্তর করা হলেও কোনো ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়নি।

আবাদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোনো ঘর নির্মাণ করা হয়নি। ঘরের ভিত কাটার কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। ঘর নির্মাণে যুক্ত মিস্ত্রি সেলিমসহ অন্যরা বলেন, ‘১৬ জুলাই ১৭টি ঘরের ভিত কাটা হয়েছে। এখানে ২২ হাজার ইট আনা হয়েছে।’ ইটের মধ্যে ২ নম্বর ইট রয়েছে—এমন অভিযোগ তাঁরা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা মিস্ত্রি মানুষ, ইট কয় নম্বর এনে দিচ্ছে, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এটা দেখবে কর্তৃপক্ষ।’

জমির দলিলপ্রাপ্ত ভাতশাইল গ্রামের জাহিদ হোসেনসহ অন্যরা বলেন, ‘গৃহ নির্মাণকাজ শুরু করার কথা চলছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন আগামী ডিসেম্বরে ঘরগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।’

অপরদিকে গোড়শাহী গ্রামের দলিলপ্রাপ্ত রহিমা খাতুনের মা ফাতেমা ও আতিকুর রহমান বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ইউএনও আমাদের শুধু জমির দলিলের ফটোকপি দিয়েছেন, ঘর তো বুঝে দেননি।’

চাকরাইল গ্রামের ছাইদুল ইসলামের স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের দলিল দেওয়া হয়েছে, এখনো ঘর দেওয়া হয়নি। ইউএনও বলেছেন ঘর তৈরি হলেই আমাদের দেওয়া হবে। দলিল যখন পেয়েছি, দেরিতে হলেও আমরা ঘর পাব।’

বদলগাছী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার জানা মতে ঘরের নির্মাণকাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।’ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান বলেন, ‘ঘর নির্মাণ না করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ঘর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে তথ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। সরকারের উন্নয়নকাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।’

ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘দুই শতক করে জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘরের কাজ চলছে।’ ঘর নির্মাণ না করেই ঘর হস্তান্তর কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে ভুল তথ্য দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভুল তথ্য দেওয়া হয়নি, ঘর নির্মাণ শেষ হলেই ঘর হস্তান্তর করা হবে।