ইঁদুর ধরে চলে সংসার

মো. আতাউর রহমান, জয়পুরহাট
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৮: ৪০
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ২৪

১৯৯৫ সাল থেকে ইঁদুর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ জন্য তিনি নানা কৌশল অবলম্বন করেন। বলা হচ্ছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলেকপুর ইউনিয়নের ভট্টপশালী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের কথা।

আনোয়ার এখন নিজ জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, গ্রামগঞ্জ-হাটবাজার ও পাড়া-মহল্লায় যান। মানুষের বসতবাড়ি ও ভিটেমাটি থেকে সুকৌশলে ইঁদুর ধরেন। বিনিময়ে লোকজন তাঁকে নানা খাদ্যদ্রব্য, টাকা এবং অন্যান্য উপহার দেন। ইঁদুর ধরার পাশাপাশি ইঁদুর নিধনের ওষুধও বিক্রি করেন তিনি। তা দিয়েই চলে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার।

ইতিমধ্যে ইঁদুর নিধনের জন্য তিনি পদক আর সনদ পেয়ে স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০০৪ সালে ২৩ হাজার ৪৫১টি ইঁদুর নিধনের জন্য তাঁকে কৃষি বিভাগ জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করেছেন।

আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১০-১২ বছর বয়সে আমি অন্যের গরু-ছাগল চরাতাম। বিনিময় পেতাম তিন বেলা খাবার আর কাপড়-চোপড়। গরু-ছাগল চরানোর সময় লক্ষ্য করি—ধান দিলে মুড়ি আর মোয়া দেন দোকানিরা। তখন গরু-ছাগল চরানোর মধ্যেই ধান কুড়াতাম। ইঁদুরের গর্ত কেটে ধান সংগ্রহ করতাম। তখন ইঁদুর মারতাম এবং ধরতাম। কিন্তু গর্ত খুঁড়ে ইঁদুর ধরা কঠিন। তাই বিকল্প উপায় চিন্তা করি। এক দিন কলাগাছের মাথার কাণ্ড দিয়ে ইঁদুরের গর্তের নতুন মাটির কাছে নকল গর্ত তৈরি করি। লক্ষ করি, নকল গর্তে ইঁদুর আসে। তখন নকল গর্ত থেকে ইঁদুর ধরে সেগুলোর লেজ সংগ্রহ করি। আর বাসাবাড়ির ইঁদুর ধরার জন্য ছিদ্রযুক্ত পাইপ ব্যবহার করে সফল হই।’

১৯৯৫ সালে এক দিন আক্কেলপুরের তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা ইসাহাকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি আনোয়ারকে ২০০টি ইঁদুরের লেজ তাঁর কার্যালয়ে জমা দিতে বলেন। তাঁর কথামতো সাত দিন পর তিনি ২০০টি ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে ৩০ কেজি গম সংগ্রহ করেন। পরের সপ্তাহে আরও ২০০টি লেজ জমা দিয়ে ২৫ কেজি চাল সংগ্রহ করেন। এভাবেই ইঁদুর ধরাকে তিনি জীবিকা নির্বাহের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

এ বছর স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাঁকে ১ হাজার ৫০০ টাকা উপহার দিয়েছেন। এভাবে এখন তিনি প্রতিদিন ২০-৫০টি ইঁদুর ধরেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫৭ জনকে ইঁদুর ধরার কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই এখন ইঁদুর ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। বর্তমানে তাঁর সঙ্গে যে শিষ্য আছেন, তাঁর নাম বিল্লাল। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামে।

শিষ্য বিল্লাল জানান, তাঁর ভাই হেলাল ছিলেন আনোয়ার হোসেনের শিষ্য। তাঁর সঙ্গেই আসেন এই গুরুর কাছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, ‘ইঁদুর নিধন করে আনোয়ার নিজের যেমন উপকার করছেন, তেমনি উপকার করছেন কৃষকের এবং দেশের। আমি তাঁর মঙ্গলকামনা করি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত