নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও তিন ফসলিজমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের চরপানা উল্যা এলাকায় ফসলি জমির মাটি কেটে, করাতকল বসিয়ে বনের গাছপালা উজাড় করে ইট পোড়াচ্ছে আকবর কবির ব্রিকস (একেবি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৯টির অবস্থান চর আমানউল্যাহ ইউনিয়নে। এখানে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় করাতকল স্থাপন করে গাছ পোড়াতে দেখা গেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে আশপাশের বাড়িঘর ছাই ও কুড়োই আচ্ছাদিত থাকে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সর্দি, কাশি ও ফুসফুসজনিত রোগ বেড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া বলেন, সকালে গোসল করে জামাকাপড় শুকাতে দিতে পারি না। শীতের মৌসুমেও বাড়ির আঙিনায় কাঁথা, কম্বল রোদে দিতে পারিনি। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমার বাড়ির গাছ মরে যাচ্ছে। কোনো ফল হয় না।’ 

সরেজমিনে উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের চরপানা উল্যা এলাকায় দেখা যায়, তিন ফসলিজমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে একেবি ইটভাটায়। সেই মাটি দিয়ে ইট তৈরি করে পোড়ানোর জন্য মজুত করে রাখা হয়েছে। এর ২০ মিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থান সুবর্ণচর উচ্চবিদ্যালয়, ৩২০ পরিবারের শেখ হাসিনা কলোনি ও চরপানা উল্যা গ্রাম জামে মসজিদ।

৮০০ থেকে ৯০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে তিনটি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মাদ্রাসা ও দুটি বাজার। একই দূরত্বে রয়েছে চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স। এ ছাড়া ইটভাটা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই রয়েছে আরও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, দুটি গ্রাম এবং মসজিদসহ বিভিন্ন এজেন্ট ব্যাংক ও এনজিও অফিস।

শিক্ষার্থীরা বলছে, ভাটায় ইট পোড়ানোর সময় ধোঁয়া তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ বিষয়ে প্রশাসন ও সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছে তারা। 

স্থানীয় নুর উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ির সঙ্গেই ইটভাটা। এর ধোঁয়ায় বাড়ির আসবাবপত্রসহ কাঁঠাল, আমগাছ নষ্ট হচ্ছে।’ চরজব্বার ইউপি  চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, নিয়ম ভেঙে ইটভাটাটি চালানোয় মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাসতন্ত্রে মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। ওই ইটভাটা পরিদর্শনে শিগগির স্যানিটারি কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। 

উপজেলা ইটভাটামালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবলু চন্দ্র কাহার সুভাষ কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে বলেন, ‘আস্তে আস্তে কাঠ পোড়ানো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা। এখন স্কুলের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ অসুস্থ হলে কী করার আছে?’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ভাটাটির মালিকপক্ষ আমার কাছে প্রত্যয়নপত্র চেয়ে আবেদন করেছিল। সরেজমিনে  দেখা গেছে, ইটভাটাটি হবে কৃষিজমিতে। তাই পরে আর প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি।’ 

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিহির লাল বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’