চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) স্বাবলম্বী হতে ২৬টি খাতে নগরবাসীর ওপর বাড়তি করারোপ করতে চায়। করপোরেশনকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতেই এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। কর আদায়ে সম্প্রতি সংস্থাটি স্থানীয় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলেই নতুন খাতে কর আদায় শুরু করবে চসিক। তবে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ বলছে, আমদানি-রপ্তানির পণ্যের ওপর সরকার ট্যাক্স নেয়। তাহলে এখন আবার সিটি করপোরেশনকে কেন কর দিতে হবে? অন্য পক্ষ বলছে, নগরের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যেহেতু পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়, তাই সিটি করপোরেশনকে এ দুই খাতে কর দেওয়া উচিত।

গত ১৯ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব কটি সিটি করপোরেশনকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর আয়বর্ধক প্রকল্প নিয়ে তৎপর হয় চসিক। ২১ এপ্রিল বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সভায় হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সের হালনাগাদ আদায় কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী করপোরেশন আরও কী কী কর, উপকর, রেট, টোল এবং ফি আদায় করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে উঠে আসে সরকারি বাজেট অনুযায়ী সিটি করপোরেশন চাইলে নগরবাসীর ভোগ ব্যবহার বা বিক্রির জন্য পণ্য আমদানির ওপর কর, নগর থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর কর, টোল জাতীয় কর পেশ বা বৃত্তির ওপর করসহ ২৬টি খাতে কর উপকর, রেট, টোল এবং ফি আদায় করতে পারবে।

এ তিনটি খাত ছাড়াও করপোরেশন চাইলে ইমারত ও জমির বার্ষিক মূল্যের ওপর কর, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর কর, ইমারত নির্মাণ এবং পুনঃ নির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর, জন্ম বিবাহ দত্তক গ্রহণ ও জিয়াফত বা ভোজের ওপর কর, বিজ্ঞাপনের কর, পশুর ওপর কর, সিনেমা ড্রামা ও নাট্য প্রদর্শনী এবং অন্যান্য আমোদপ্রমোদ এবং বিনোদনের ওপর কর, মোটর গাড়ি এবং নৌকা ব্যতীত অন্যান্য যানবাহনের ওপর কর, বাতি অগ্নি রেট, মামলা নিষ্পত্তি রেট জনসেবামূলক কার্য সম্পাদনের জন্য রেট, পানি কল ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য রেট, সরকার কর্তৃক আরোপিত করের ওপর, উপকর স্কুল ফি, করপোরেশন পরিচালিত কোনো জনসেবামূলক ধার্য থেকে প্রাপ্ত করের ওপর ফি, মেলা কৃতি প্রদর্শনী, শিল্প প্রদর্শনী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য জনসমাবেশের ওপর ফি, বাজারের ওপর ফি, করপোরেশনের দেওয়া লাইসেন্স, অনুমোদন ও অনুমতির জন্য ফি, করপোরেশনের বিশেষ কার্যের জন্য ফি, পশু জবাইয়ের জন্য ফি আদায় করতে পারবে। এ ২৬টি খাত থেকে শুরুতে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওপর করারোপ করতে চায় সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া আমরা নতুন করে কোনো কর আদায় করতে পারব না। নতুন ২৬টি খাতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওপর করারোপের জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। কিন্তু এখনো মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কোনো উত্তর দেয়নি।’

সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সম্পর্ক কী? তারা (চসিক) কেন আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওপর করারোপ করবে? এর কোনো যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।’

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারকে কর দেন। তাহলে একই পণ্যের জন্য সিটি করপোরেশনকে আবার কর দেবে কেন? তিনি সিটি করপোরেশনকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান।