ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক একসময় মরণফাঁদ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে বাঁক প্রশস্তকরণ, ডিভাইডার বসানো, বাসস্ট্যান্ড এলাকাগুলোতে ডেডিকেটেড লেনসহ সার্ভিস লেন, আন্ডারপাস, ওভারব্রিজ এবং বাস-বে নির্মাণ করায় সড়কে দুর্ঘটনা কমে এসেছিল। তবে সম্প্রতি এ মহাসড়কে আবারও বেড়েছে দুর্ঘটনা।

উন্নয়নকাজ চলায় এমনিতেই মহাসড়কটির অবস্থা নাজুক। এর মধ্যে দূরপাল্লার দ্রুতগামী পরিবহনের পাশাপাশি আন্তজেলা বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, অটোরিকশা, ভ্যান চলছে সমানতালে। ফলে এই মহাসড়কে চলাচল এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮ জন, আহত হয়েছেন ৩৫ জন। মামলা করা হয়েছে ৫৮টি। ৫৩টি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ৩৮ জনকে। ২০২১ সালে এ সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯০ জন, আহত হন ৭০। দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে ১০২টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৫ জনকে। ৫৫টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। ভুক্তভোগীরা মামলা না করলে ওই সব দুর্ঘটনা পুলিশের পরিসংখ্যানে উঠে আসে না বলে জানানো হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আরিচা মহাসড়কের সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট হচ্ছে উথুলী, টেপড়া, মুশুরা, বরংগাইল, মহাদেবপুর, পাঁচুরিয়া, পুখুরিয়া, জোকা, বানিয়াজুরী, মুলজান, জাগির, ধামরাই ও নয়ারহাট। তবে দুর্ঘটনা রোধে এ স্পটগুলোর বেশির ভাগে ডিভাইডার বসানো হয়। কয়েক জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আন্ডারপাস ও ফুটওভারব্রিজ।

সাভার থেকে বানিয়াজুরী নিয়মিত বাসে যাতায়াতকারী মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘এ সড়কে সেলফি পরিবহনের চালকেরা বেপরোয়া। অহেতুক ওভারটেক করা, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোয় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।’

৪ মে ধামরাইয়ের বাথুলীতে সেলফি পরিবহনের বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। ৮ মে মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ভাটবাউর এলাকায় দুই বাসের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। ঢাকামুখী সেলফি পরিবহনের সঙ্গে পাটুরিয়ার দিকে যাওয়া এক বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন। ১১ মে ঘিওরের জোকা এলাকায় সেলফি পরিবহন ও সেবা গ্রিনলাইন পরিবহনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৩০ যাত্রী আহত হন।

এর আগে ১৮ জানুয়ারি সেলফি পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে। এতে আহত হন ৭ যাত্রী। ১৩ এপ্রিল ডাউটিয়ায় ওভারটেক করার সময় সেলফি পরিবহনের সঙ্গে অপর এক বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২০ যাত্রী আহত হন।

ওই দুর্ঘটনায় আহত মোহাম্মদ আলী জানান, বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করতে গিয়েই এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তায় আরও কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যাত্রীরা বলার পরও সতর্ক হননি চালক।

এ ছাড়া গত এক বছরে এই পরিবহনের ছোট-বড় ৮০টি দুর্ঘটনার খবর জানা গেছে। গত ১৫ দিনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সেলফি পরিবহনের কমপক্ষে ১১টি বাস দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সেলফি পরিবহনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, নতুন বাস নামানোর জন্য মালিকদের চাপ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ বাস চালাতে মালিকদের নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা জহুরা বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সেলফি গাড়ির ব্যবস্থাপনা কমিটিকে যথোপযুক্ত আইন মেনে চলতে বলা হয়েছে।’