শতাধিক অবৈধ কারখানা তৈরি করছে নিষিদ্ধ যান

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২২, ১৩: ১৪

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গড়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা তৈরির শতাধিক কারখানা। এ ছাড়া গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপগুলোতেও তৈরি হচ্ছে অবৈধ এসব যান।

রাত-দিন এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে অটোরিকশা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে নিষিদ্ধ এসব যান।

জানা গেছে, অটোরিকশা তৈরিতে সরকারের কোনো ধরনের বৈধতা না থাকলেও অটোরিকশা কারখানার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো আইনি পদক্ষেপ নেই। এতে দিনের পর দিন বেড়েই চলছে অটোরিকশা। বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানি। উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রেও বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় একটি মহল অবাধে তৈরি করছে এসব যান। তবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, অবৈধ এসব কারখানা নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে; পাশাপাশি অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এখনই সময় অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে অবৈধ অটোরিকশার নিচে পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর সারি লম্বা হবে; পাশাপাশি অটোরিকশায় চার্জের জন্য বিদ্যুতেরও অপচয় হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের রঙ্গিলা বাজার এলাকায় আল মদিনা ব্যাটারি হাউস নামে রয়েছে অটোরিকশা তৈরির একটি কারখানা।

সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক কর্মচারী তৈরি করছেন অটোরিকশা। প্রতিদিন এখানে অসংখ্য অটোরিকশা বিক্রি হয়। কনটেইনার ভর্তি করে অটোরিকশা নিতে দেখা যায় গ্রাহকদের। কোথাও চলছে রং করার কাজ, কোথায় চলছে সংযোজনের কাজ। লোহালক্কড়ের টুংটাং শব্দে মুখর কারখানার পুরো পরিবেশ।

এ ছাড়া উপজেলা শহরের শ্রীপুর চৌরাস্তা, কেওয়া গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, সলিং মোড়, মাওনা, নয়নপুর, এমসি, জৈনা, কাওরাইদ, আবদার, বরমী রাজাবাড়ি, গোসিঙ্গা, রাজেন্দ্রপুর, রঙ্গিলা বাজারসহ আরও বেশ কয়েকটি পয়েন্টে রয়েছে অটোরিকশা তৈরির বেশ কিছু কারখানা।

কথা হলে রঙ্গিলা বাজার এলাকার আল মদিনা ব্যাটারি হাউসের ব্যবস্থাপক মনির হোসেন বলেন, ‘আমি বেশি কিছু বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে মালামাল এনে এখান থেকে সব প্রস্তুতি শেষে বিক্রি করা হয়। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারিও বিক্রি হয়।’

আবদার এলাকার অটোরিকশা তৈরির একটি কারখানায় গেলে কথা হয় মিস্ত্রি সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে, মাওনা চৌরাস্তা থেকে লোহালক্কড় আর চাকা ব্যাটারি এনে গাড়ি তৈরি করে বিক্রি করা হয়। কারাখানার লাইসেন্স ও অনুমতির বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘এগুলো আমাদের নেই। আমাদের আশপাশের কোনো অটোরিকশা কারখানারও নেই মনে হয়।’

পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবুল খায়ের বলেন, দিনের পর দিন রাস্তাঘাটে অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অবৈধ অটোরিকশা কারখানা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

কথা হলে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং যানজটমুক্ত করতে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে নির্দিষ্ট একটি মেয়াদে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। লাইসেন্স দেওয়ার পর অন্য স্থানের অটোরিকশা বরমীতে চলাচল করতে পারবে না। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে নজরদারি করা হবে।’ অবৈধ অটোরিকশা কারখানার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, যত্রতত্র গড়ে ওঠা অটোরিকশা তৈরির কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত