একদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র সহসভাপতি আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এবং কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও টেকনোক্র্যাট কোটায় বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অন্যদিকে বিএনপির ড. জালাল উদ্দিন এবং দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী। আগামী নির্বাচনের আগে হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশীতে ঠাসা চাঁদপুর-২ আসন।

আসনটির ভোটের মাঠ মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিয়মিত নিজ নিজ এলাকায় চষে বেড়ালেও প্রতিপক্ষ বিএনপি বা জোটগত প্রার্থীদের নির্বাচনী তেমন একটা আমেজ নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষে বেশ কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রাক্‌-প্রস্তুতি হিসেবে নানা ধর্মীয় ও জাতীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। কিন্তু বিএনপি অনেকটাই নীরব। তবে আসনটি ফিরে পেতে দলটি মরিয়া বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা-কর্মী।

স্থানীয়রা বলছেন, অতীতে এই আসন থেকে যে দলের প্রতিনিধি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দলই সরকার গঠন করেছে। রাজধানীর সন্নিকটে হওয়ায় এই আসনের গুরুত্ব বেশি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট নেতা ও সরকারের আমলাদের জন্মস্থান এখানে। প্রায় সব সরকারের আমলে এই আসন মন্ত্রী পেয়েছে। তাই উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপক। আগামী নির্বাচনেও তেমনটা চান তাঁরা।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ইসফাক আহসান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা শেফালী আক্তার।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ও বিশ্লেষকদের মতে, এই আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এ ছাড়া বর্তমান এমপি রুহুল এবং অধ্যাপক ড. শামসুল আলমও আছেন আলোচনায়। শামসুল আলম পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। ড. শামসুল আলম বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির আহমদ মাস্টার বলেন, ‘তিনি একজন স্বচ্ছ ইমেজ এবং সৎ ও যোগ্য লোক।’

নুরুল আমিন রুহুল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সাড়ে চার বছর ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তৃণমূলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশছেন নিবিড়ভাবে। তাঁর সম্পর্কে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খোকন বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে রুহুল ভাইকে খুব প্রয়োজন।’

সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু গত নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। যুবসমাজের সঙ্গে তাঁর রয়েছে আন্তরিক সম্পর্ক। দীপু সম্পর্কে উত্তর মতলব উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শরিফ বলেন, ‘দীপু চৌধুরী যুবসমাজের আইকন। তিনি এই আসনে এমপি হলে বাবার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ তাঁর হাত দিয়েই সম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এম ইসফাক আহসান এলাকায় দানবীর হিসেবে বেশ পরিচিত। শেফালী আক্তারও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরাও এলাকায় সামাজিক নানা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।

বিএনপিতে এখনো উত্তাপ না থাকলেও প্রস্তুতি চলছে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে ড. জালাল উদ্দিন দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল আমিন রুহুলের কাছে পরাজিত হন। এবার ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস শুক্কুর পাটোয়ারী এবং সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী ও তিনবারের সংসদ সদস্য নূরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা আলোচনায় রয়েছেন।

এই আসনে বিএনপির বর্তমান জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ড. জালাল উদ্দিন সম্পর্কে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু বলেন, ‘ড. জালাল এই আসনে এমপি হলে আমরা বিশ্বাস করি, সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানসহ আধুনিক মতলব নির্মাণে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করবেন।’

জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির দীর্ঘদিনের সভাপতি এমরান হোসেন মিয়া। তিনি এর আগেও চাঁদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।