ছাদখোলা ভালোবাসা, হ্যাটখোলা স্যালুট

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ২৮
Thumbnail image

শিরোপাজয়ী কোনো দলকে বরণ করে নিতে শেষ কবে ঢাকার রাস্তায় এত ভিড় হয়েছে, স্মৃতি ঘেঁটে বের করতে পারলেন না বাংলাদেশ নারী দলের কোচ মাসুদ আহমেদ। তিনি শুধু বললেন, ‘আগে নিটল টাটা টুর্নামেন্টের ট্রফিজয়ী দলকে দেখতে এভাবে মানুষজন ভিড় করত। কিন্তু, সে তো অনেক আগের কাহিনি!’

বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি দিনগুলোয় ট্রফি হাতে ঢাকার রাস্তায় ঘোরাটা একটা ঐতিহ্য ছিল। বর্তমান প্রজন্মের কাছে অতীতকে নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের সাফজয়ী নারী ফুটবলাররা। শিরোপার রঙে ঢাকার রাস্তা রাঙাল নতুন করে। ছাদখোলা বাসে জয়ীদের বরণ করে নিতে নতুন ঐতিহ্যের শুরু হলো নারী ফুটবলারদের হাত ধরে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলের বাফুফে ভবন পর্যন্ত দূরত্ব সাকল্যে ১৭ কিলোমিটার। রাস্তা ফাঁকা থাকলে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার রাস্তা। যানবাহনের চাপ থাকলে এই রাস্তা পাড়ি দিতে সাকুল্যে ৩ ঘণ্টা। সাফজয়ী মেয়েদের সময় লাগল ৫ ঘণ্টা! প্রতি রাস্তার মোড়ে উৎসুক সাধারণ জনতা এক পলকের জন্য হলেও দেখতে চেয়েছেন সাবিনা-সানজিদাদের। হাত নেড়ে, শিরোপা উঁচিয়ে তাদের ভালোবাসার জবাব দিয়েছেন বাংলার মেয়েরা।

নেপালের বিপক্ষে সাফের ফাইনালের আগে ছাদখোলা বাসে চড়ার আবদার জানিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশ নারী দলের উইঙ্গার সানজিদা আক্তার। ৩-১ গোলে শিরোপা জয়ের পর তাঁদের ইচ্ছাপূরণ করতে এক রাতে নতুন করে সাজানো হয়েছে দোতলা বিআরটিসি বাস। কেটে ফেলা হয়েছে বাসের ছাদ। বিআরটিসি বাস থেকে সেই বাস হয়ে গেল ‘চ্যাম্পিয়নদের’ বাস। বাসে চড়ার মঞ্চ প্রস্তুতই ছিল। বিকেল ৩টায় সেই বাসে চড়ে বাফুফে ভবনে যাত্রা শুরু সাবিনাদের। কাঠমান্ডু থেকে গতকাল দুপুর ২টার একটু আগে ঢাকায় পা রাখে বাংলাদেশ দল। 

বিমানবন্দরে নানা আয়োজনে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। সংবাদকর্মীদের ভিড় দেখে রীতিমতো চমকে গেছেন ফুটবলাররা। এরপর বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে সাজিয়ে রাখা ছাদখোলা বাসে উঠে যান দলের সবাই। ধীর গতিতে বাসটি এগোতে শুরু করলে আগেই সড়কে অপেক্ষায় থাকা অনেকে বাসের পেছনে পেছনে ছুটছেন। কেউ-বা চড়েছেন ফুটওভার ব্রিজে। সবার ইচ্ছা এক পলক শিরোপাজয়ী মেয়েদের দেখা।

শিরোপাজয়ীদের স্বাগত জানিয়েছেন গানের তালে তালে। কেউ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, কেউ চিৎকার করছে, কেউবা ধরছে স্লোগান। আবার কেউ ছাদখোলা গাড়ির সঙ্গে তুলেছেন সেলফি। প্রায় পুরো যাত্রাপথে ছিল এমনই দৃশ্য। গাড়ি চলছে ধীর গতিতে, সমাগম সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চলতি পথে আহত হয়ে মাথায় তিনটি সেলাই লেগেছে ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমার। মাথায় ব্যথা নিয়েও হাসি মুখে বলেন, ‘আমি ভালো আছি।’

গাড়িতে, মানুষে জনাকীর্ণ রাস্তা পেরিয়ে সন্ধ্যায় যখন বাফুফে ভবনে এল ছাদ খোলা দুই তলা বাস। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য বাফুফে ভবনে। দলের মলিন পারফরম্যান্সে যে বাফুফে বারবার শিরোনাম হয় নেতিবাচক সব খবরে, সেই তারা গতকাল জ্বলে উঠল সাবিনাদের মতো তারাদের আলোয়।  

দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্তি শিরোপা আনা মেয়েদের চোখেমুখে। বাফুফে ভবনে প্রবেশ পথেও সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ফুটবলাররা। বাফুফে ভবনের আশপাশে দোকানদারদের কাছে এত দিন এই মেয়েরা ছিলেন শুধুই ফুটবলার। আজ থেকে তাদের কাছে সাবিনাদের পরিচয়, ‘চ্যাম্পিয়ন’!

মানুষের থিকথিকে ভিড় আর সংবাদমাধ্যমের তুমুল আগ্রহ সামলে সাবিনাদের অভ্যর্থনার চূড়ান্ত পর্ব হলো বাফুফে ভবনেই। যেখান থেকে ঘোষণা এল আরও বড় লক্ষ্য পূরণের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত