নিলামের নামে সিন্ডিকেট, হাতিয়ে নিল ৪০ গরু

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ৪৮
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ১৬

শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছেন নিলামে গরু কেনার জন্য। কিন্তু তিনজন ছাড়া কেউ ডাকে অংশ নিচ্ছেন না। এই তিনজন কে কত গরুর মূল্য দিতে চান, তা আবার বলছেন আরেকজন। অন্য কেউ নিলামে অংশ নেবেন কি না, তার জন্য অপেক্ষা করছেন না কর্মকর্তারা। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে একেক লটের গরু বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী হাটে আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে গতকাল মঙ্গলবার এভাবেই ৪০টি গরু নিলামের নামে স্থানীয় সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা সব গরু কিনে নেওয়ার পর বিকেলে খামারের ভেতরেই আবার নিলাম করেন। তখন তাঁদের কাছ থেকে গরুপ্রতি ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কেনার সুযোগ পান সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, মাঝেমধ্যেই সরকারি এই খামার থেকে এভাবে নিলামের মাধ্যমে গরু বিক্রি করা হয়। প্রতিবারই এভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা সিন্ডিকেট করে গরু কিনে নেন। সিন্ডিকেটের তদবিরে গরুগুলোর সর্বনিম্ন সরকারি মূল্যও বাজারদর অপেক্ষা কম ধরা হয়। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। আর পকেট ভরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর। খামারের কর্মকর্তারাও অবৈধ সুবিধা পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে খামার কর্তৃপক্ষের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গরুর যে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়, তার চেয়েও বেশি টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে গতকাল নিলাম চলাকালে দেখা গেছে, নির্ধারিত ভিত্তিমূল্যের চেয়ে মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দরে গরু বিক্রি করা হচ্ছে।

গতকাল বেলা ১১টায় নিলাম কার্যক্রম শুরু করতে চান কর্মকর্তারা। তখন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল বলেন, নিলামের আগে তাঁরা আরেকটু সময় চান। কর্মকর্তারা সময় দিলেন। এবার নিলামে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আলাদা করে কথা বললেন ফয়সাল। তিনি ‘অনুমতি’ দেওয়ার পর নিলাম কার্যক্রম শুরু করলেন কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নিলামে অংশ নিতে ৪০০ ব্যক্তি আবেদন করলেও চারজন ছাড়া কেউ নিলাম ডাকেননি। তাঁদের মধ্যে আবার একজন খামারের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. বাদশা। অমিত হাসান নামের এক ব্যক্তি তিনটি বাছুরের নিলাম ডাকলেও তাঁকে তাড়িয়ে দেন বাদশা। নিজের ডাকের পাশাপাশি বাবু, মেহেরাব ও কালু নামের তিনজনের হয়েও ডাক নেন এই কর্মচারী। আর প্রতি ডাকে মাত্র ২০০ টাকা করে গরুর দাম বাড়ান। এভাবে তিনবার ডাকার পর সরকার-নির্ধারিত ভিত্তিমূল্যের চেয়ে ৬০০ টাকা বেশি দামে গরুগুলো বিক্রি হয়ে যায়।

স্থানীয় কৃষক অমিত হাসান বললেন, ‘প্রতিবার এভাবেই সিন্ডিকেট করে গরু হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। আমার বাড়িতে একটা গরু আছে, আরেকটা কেনার জন্য এসেছিলাম। দেখলেন তো, কীভাবে আমাকে বাধা দেওয়া হলো।’

অমিত হাসানকে নিলামে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে সেখানে উপস্থিত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব দেখা আমাদের কাজ না। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে করতে হবে।’

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এটা এখনই খোঁজ নিচ্ছি। এ রকম তো হওয়ার কথা না।’ 
এভাবে সিন্ডিকেট করে সব গরু কেনা এবং একই স্থানে পরে বিক্রির বিষয়ে কথা বলতে বিকেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালমান ফিরোজ ফয়সালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

জানতে চাইলে খামারের উপপরিচালক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি না ডাকে, তাহলে আমার কী করার আছে!’ খামারের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাদশার নিলামে অংশগ্রহণ এবং অন্যদের অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে ডা. আতিকুর বলেন, ‘গরু যে কেউ কিনতে পারে। কর্মচারী হলেও তার কেনার অধিকার আছে। সে হয়তো কয়েকজনের সঙ্গে গরু কিনেছে। সে কাউকে বাধা দিয়েছে, এটা আমার চোখে পড়েনি। কাউকে বাধা দেওয়া হলে সে তো আমার কাছে অভিযোগ করতে পারত।’

উপপরিচালক আরও বলেন, ‘আমার ৪০টা গরুর সরকার-নির্ধারিত মূল্য ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। আমরা বিক্রি করেছি ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকায়। সরকারের তো ক্ষতি হয়নি। তবে আরও অনেকে ডাকে অংশ নিলে হয়তো দামটা আরেকটু বেশি হতো।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত