‘৮ দিনে তিনবার খেয়েছি ভাত, বাকি বেলা চিড়া’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০১: ৩৯

‘দুঃখ পিছু ছাড়ছে না। ঘরে বন্যার পানি ঢুকায় আট দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। সঙ্গে মেয়ের তিন সন্তান রয়েছে। ছেলেমেয়ে ঢাকায় থাকে। গত আট দিনে তিনবার ভাত খেয়েছি, বাকি বেলা চলেছে চিড়া-মুড়ি খেয়ে। নাতিদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ঘরে এখনো কোমরপানি। তা কমতে আরও ৫-৭ দিন সময় লাগবে।’

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রূপসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কথাগুলো বলছিলেন আশি বছরের বৃদ্ধা সখিনা খাতুন। তিনি দুই বছর আগে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ওঠেন। সেখানেই মেয়ে ও তিন নাতি নিয়ে তাঁর বসবাস। ৪ অক্টোবর আকস্মিক বন্যায় তাঁর ঘরে পানি ঢুকে। পরে ঠাঁই হয় পাশের রূপসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সখিনার মতো খেয়ে না-খেয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে দিনাতিপাত করছেন কমপক্ষে ৩০ জন। তাঁদের একজন সত্তরোর্ধ্ব নজর আলী। তিনি বলেন, ‘এখানে শুকনো খাবার পাওয়া গেলেও ভাত কপালে খুব একটা জুটছে না। ভাত যে রান্না করে খাব তারও কোনো সুযোগ নেই। পানির কারণে কোথাও লাকড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। আট দিন ধরে আত্মীয়স্বজন কিছু ভাত খেতে দিলেও বেশির ভাগ সময় চিড়া-মুড়ি খেয়ে চলছি।’

এ নিয়ে কথা হলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ফুলপুর উপজেলার সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কিছুদিন আগে ফেনী ও খুলনায় বন্যা হলে মানুষজন সহযোগিতা নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত কেউ তেমন কোনো সহযোগিতা নিয়ে আসেনি। প্রশাসন ও কিছু সংগঠন থেকে যে সহযোগিতা করা হচ্ছে, তা দিয়ে কোনো রকম চলছে। এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেওয়ায় ওষুধের প্রয়োজন জরুরি।’

এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বাড়িঘরের পানি ইতিমধ্যে নামতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলে তিন-চার দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। বন্যায় দুই লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই দেওয়া হয় ২ হাজার মানুষকে। এখনো কয়েক শ মানুষ কেন্দ্রে রয়েছে। তিন উপজেলায় ৭ লাখ টাকা, ৬৩ টন চাল ও ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। 

যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে ৩ অক্টোবর নেতাই নদের বাঁধ উপচে হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় ভারত থেকে পানি প্রবেশ করে। কিন্তু কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। এখন পানি একটু ধীর গতিতে নামছে। কারণ, ভোগাই, কংস ও খড়িয়া নদ-নদীর বিভিন্ন অংশে দখল এবং ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত