চিকিৎসা হচ্ছে না জরিফুলের

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার জরিফুল ইসলাম (৩২)। তিনি ঢাকার সাভারে মুরগি বিক্রির একটি দোকানের কর্মচারী। গত ১৯ জুলাই সাভারে আন্দোলনের সময় পুলিশ গুলি চালালে জরিফুলের বাঁ পায়ে দুটি গুলি লাগে। পোষা গরু-ছাগল বিক্রি করে কিছুদিন চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। টাকার অভাবে আর চিকিৎসা নিতে পারছেন না। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাঁর। 

জরিফুল বলেন, ‘ওই দিন ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিই। একটা গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি পড়ে যাই। অন্যরা ধরাধরি করে তোলার মধ্যেই অল্পের জন্য বেঁচে যাই। অন্য একটা গুলি এসে একই পায়ে লাগে। ছাত্ররা উদ্ধার করে তিনটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এনাম মেডিকেলের সামনে যেতেই ছাত্রলীগের ছেলেরা ও পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরে সরিয়ে দেয়। এই অবস্থায় কোনোখানে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে সাভারের গেন্ডা এলাকার সীমা হাসপাতালে ভর্তি হই।’ আহত জরিফুল বলেন, ‘ওখানে গুলি বের করতে ৬০ হাজার টাকা চায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ওই দিনই সাভারের বিরুলিয়ার কমলাপুর গ্রাম এলাকার অগাস্টিন হাড়ভাঙা হাসপাতালে ভর্তি হই। বাড়িতে পোষা তিনটি গরু, ছাগল বিক্রি করে ওখানে ১১ দিন চিকিৎসা নিই। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে পায়ের গুলি বের করা হয়।’

তবে জরিফুল বলেন, ‘পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। চলাফেরা করতে পারি না। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাড়িতে চলে আসি। গত ৭ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। সাত দিন পর রিলিজ দেয়, এরপর বাড়িতে আসি।’ 
গুলিবিদ্ধ ওই আন্দোলনকারী বলেন, ‘গত ২৫ আগস্ট পায়ে রড লাগানো হয়েছে। আমি কোথাও থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। আমার দুটি ছোট সন্তান, পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছি। প্রচুর ব্যথা, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। টাকার অভাবে ওষুধ কিনে খেতে পারছি না। কী করি, ভেবে পাচ্ছি না।’ 

জরিফুলের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা পূর্ব সারডুবী গ্রামে। বাবার নাম আব্দুস সাত্তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জরিফুল বিছানায় পড়ে থাকায় এবং আয়রোজগার বন্ধ থাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জরিফুলের স্ত্রী রেজিনা বেগম বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ। তাঁর উপার্জনের টাকায় সংসার চলত। আজ আমার স্বামী গুলি লেগে পঙ্গু হয়ে বাড়িতেই পড়ে আছে। আমরা গরির, সংসারে তেমন কিছু নাই; ধারদেনা করে কোনোমতে চলছি। দুটি সন্তান নিয়ে কষ্টের মধ্যে আছি। বাড়িতে খাবার পর্যন্ত নাই। স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না।’ 

এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জরিফুল ইসলামের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি। তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে আবেদন দিতে বলেছি। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত